নিউজনেস্ট

আজকের জুমার বয়ানে যা বললেন মুফতি আব্দুল মালেক

অভ্যুত্থানে নিহতদের শহিদ বলার ব্যাপারে যা বললেন আব্দুল মালেক সাহেব
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব। ছবি: সংগৃহীত

২২ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে বাইতুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতীব মুফতি আব্দুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ আজকের জুমার খুতবায় তাকওয়া, ঈমান, এবং শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর আলোচনায় কোরআনের প্রথম কয়েকটি আয়াতের ব্যাখ্যা এবং মুত্তাকী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়।হেদায়েতের উৎস পবিত্র কোরআন

মুফতি আব্দুল মালেক বয়ানের শুরুতেই কোরআন সম্পর্কে বলেন, “এই কিতাবের মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এবং মুত্তাকীদের জন্য হেদায়েত।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোরআন থেকে হেদায়েত লাভ করতে হলে তাকওয়া অর্জন করা আবশ্যক। এ জন্যই আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের গুণাবলি হিসেবে তাকওয়াকে প্রথম স্থানে রাখা হয়েছে।

তাকওয়া ও ঈমান: পারস্পরিক সম্পর্ক

খতীব বলেন, মুত্তাকীদের প্রথম গুণ হলো ঈমান আনা। কিন্তু বর্তমান সময়ে মুসলমানরা ঈমান ও ইসলামের প্রতি উদাসীন। অথচ ঈমান এবং ইসলাম ছাড়া পরিপূর্ণ মুত্তাকী হওয়া সম্ভব নয়।

তিনি নবীগণের দাওয়াতের দুটি মূল পয়েন্ট উল্লেখ করেন:

১. আল্লাহর ইবাদত করা।

২. আল্লাহকে ভয় করা।

খতীব আরও বলেন, তাওহীদ ও তাকওয়ার মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। তাওহীদের বীজ যদি অন্তরে রোপণ করা না হয়, তাহলে তাকওয়ার পূর্ণতা অর্জিত হয় না।

কালেমার উদাহরণ: একটি ফলদায়ক গাছ

মুফতি আব্দুল মালেক কালেমায়ে তাইয়্যেবার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এটি একটি ফলদায়ক গাছের মতো। যেমন একটি গাছ তখনই ফলদায়ক হয়, যখন তার বীজ সঠিকভাবে রোপণ করা হয় এবং যত্ন নেওয়া হয়। তেমনি কালেমায়ে তাইয়্যেবা হলো ঈমানের বীজ, যা অন্তরে রোপণ করার পর তা মজবুত করতে হলে সুন্নাহ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে।

তিনি বলেন, কালেমার প্রথম অংশ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর মাধ্যমে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা হয়। ঈমানে মুফাসসালের প্রতিটি বিষয় বোঝা এবং তার পরিপন্থী বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কালেমার দ্বিতীয় অংশ “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর বিশ্বাস এবং তাঁর শরীয়তের অনুসরণ নিশ্চিত হয়।

শরীয়তের গুরুত্ব ও পশ্চিমা আদর্শের সমালোচনা

খতীব সূরা জাসিয়ার একটি আয়াত উল্লেখ করে বলেন:“আপনাকে আমরা শরীয়ত দান করেছি; আপনি এই শরীয়তের অনুসরণ করুন। যাদের কাছে ওহীর জ্ঞান নেই, তাদের অনুসরণ করবেন না।”

তিনি বলেন, কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের জন্য শরীয়তের অনুসরণ বাধ্যতামূলক। পশ্চিমা বিশ্বের কাছে জাগতিক জ্ঞান থাকলেও ওহীর জ্ঞান নেই, তাই তাদের আদর্শ মুসলমানদের মুক্তি দিতে পারে না।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, পশ্চিমা সভ্যতা বারবার ব্যর্থ হয়েছে মানুষের প্রকৃত কল্যাণে। আজও তারা মানবজীবনে প্রকৃত সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এ জন্য মুসলমানদের শরীয়ত ও সুন্নাহর পথে ফিরে আসতে হবে।

মুসলিম উম্মাহর প্রতি হুঁশিয়ারি

খতীব বলেন, কাফের ও মুশরিক শক্তি সর্বদাই ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু। কিন্তু মুসলমানরা আজ তাদের প্রকৃত বন্ধুকে ভুলে গেছে। মুসলমানদের প্রকৃত অভিভাবক হলেন আল্লাহ। তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহর অভিভাবকত্ব অর্জন করা সম্ভব।

তিনি সূরা বাকারার একটি আয়াত উল্লেখ করে বলেন:“অপরাধী ও মুমিন কখনো সমান হতে পারে না। তাদের জীবন ও মৃত্যুর বিচারও এক নয়।”

তিনি বলেন, মুসলিম সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠার নামে এমন সংস্কার প্রচার করা হচ্ছে, যা ইসলামের মূলনীতির পরিপন্থী। এই ইসলামবিরোধী সংস্কৃতি আমদানি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

সমাজ ও সংস্কারের সঠিক পথ

খতীব বলেন, “আমাদের সমাজে ইন্সাফ প্রতিষ্ঠার জন্য কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা যথেষ্ট। পশ্চিমা সভ্যতার আদর্শ অনুসরণ করে কখনো প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়।”

তিনি সতর্ক করেন, “যারা ইসলামবিরোধী সংস্কৃতি প্রচার বা গ্রহণের চেষ্টা করবে, তারা আল্লাহর গজবে পড়বে। আল্লাহকে ভয় করুন এবং কোরআন-সুন্নাহর পথে ফিরে আসুন।”

বয়ানের শেষাংশে মুফতি আব্দুল মালেক বলেন, “এই কোরআনই মানুষের জন্য প্রকৃত হেদায়েতের আলোকবর্তিকা। এর অনুসরণেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি। তাকওয়া অর্জন করুন এবং আল্লাহর বন্ধুত্ব লাভ করুন।”

আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপনের তাওফিক দান করেন।

ডেস্ক রিপোর্ট
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত