নিউজনেস্ট

মসজিদ ইস্যুতে হিন্দুত্ববাদীদের উস্কানি পুলিশের গুলিতে তিন মুসলিম নিহত

উত্তরপ্রদেশে মসজিদ ইস্যু: হিন্দুত্ববাদীদের উস্কানি ও তিন মুসলিম নিহত
উত্তরপ্রদেশে মসজিদ ইস্যু: হিন্দুত্ববাদীদের উস্কানি ও তিন মুসলিম নিহত। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের উত্তরপ্রদেশের সামভাল এলাকায় মুঘল আমলের একটি মসজিদকে ঘিরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। রোববার সকালে আদালতের নির্দেশে জরিপ চালাতে গেলে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের গুলিতে তিন মুসলিম নিহত হন। তবে এই ঘটনার পেছনে মূলত হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর উস্কানি ও বিতর্কিত দাবিই সহিংসতার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

উস্কানিমূলক দাবি ও হিন্দুত্ববাদীদের ভূমিকা

হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, মুঘল আমলের এই মসজিদের জায়গায় একসময় শ্রী হরিহর দেবতার একটি মন্দির ছিল, যা সম্রাট বাবুর নির্দেশে ধ্বংস করা হয়। এই দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ না থাকলেও, আদালতে পিটিশন দায়ের করে তারা জরিপের অনুমতি নেয়। এমনকি তারা ঐতিহাসিক গ্রন্থ বাবুরনামা এবং আইন-ই-আকবর থেকে খণ্ডিত তথ্য উদ্ধৃত করে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে।

এই দাবির নেতৃত্বে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন এবং তার বাবা অ্যাডভোকেট হরি শঙ্কর জৈন। উল্লেখ্য, এই বাবা-ছেলে এর আগেও জ্ঞানবাপী মসজিদ-কাশি বিশ্বনাথ মন্দির ইস্যুতে উস্কানিমূলক ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে বারবার সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠেছে।

জরিপে বাধা: শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে সহিংস দমন

রোববার সকালে জরিপ দল মসজিদ এলাকায় পৌঁছালে মুসল্লিরা শান্তিপূর্ণভাবে এর প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু তাদের এই প্রতিবাদকেও হিন্দুত্ববাদীরা ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন পুলিশ মুসল্লিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়, এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান।

রাজনৈতিক প্রভাব ও বিজেপির ভূমিকা

স্থানীয় রাজনীতিবিদ এবং সমাজবাদী পার্টির এমপি জিয়াউর রহমান এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এই মসজিদ বহু পুরোনো এবং এর জায়গায় কোনো মন্দির থাকার প্রমাণ নেই। তিনি ১৯৯১ সালের একটি আদালতের রায়ের কথা তুলে ধরেন, যেখানে ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর পূর্বাবস্থাকে অক্ষত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব আরও স্পষ্টভাবে অভিযোগ করেছেন যে, হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে। এটি তাদের পুরনো কৌশল, যাতে স্থানীয় উপনির্বাচনের বিতর্ক থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়া যায় এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন বাড়িয়ে ভোটের ফায়দা তোলা যায়।

এই ঘটনার পুরো প্রেক্ষাপট হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার একটি অংশ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মসজিদগুলোর ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে চায়। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, এ ধরনের ঘটনা সামাজিক সম্প্রীতিতে আঘাত হানার জন্য পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়।

পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং হিন্দুত্ববাদীদের লাগাতার উস্কানি সামভালকে রক্তাক্ত করেছে। অথচ, এ ঘটনার দায়ভার পুরোপুরি চাপানো হচ্ছে মুসলিমদের ওপর। এটি একটি স্পষ্ট উদাহরণ, যেখানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির স্বার্থে মানুষের জীবনকে তুচ্ছ করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত