গাজার ভূমি চিরকাল ফিলিস্তিনিদেরই থাকবে, এমন মন্তব্য করে ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস-এর অন্যতম নেতা সামি আবু জুহরি বলেছেন, ইসরায়েলি দখলদাররা ভুল ধারণায় রয়েছে যে তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’ সামি আবু জুহরি আরও জানান, হামাস এমন কোনো সমঝোতা মেনে নেবে না, যা ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে ব্যর্থ হয় কিংবা তাদের নিজ ঘরে ফেরার পথ সুগম করে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায়: নতুন যুগের সম্ভাবনা
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োহাভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই প্রসঙ্গে আবু জুহরি বলেন, ‘ইসরায়েলি নেতাদের গ্রেপ্তারে আসন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টাই হবে আসল পরীক্ষা।’
আদালত জানিয়েছে, গাজার জনগণকে ক্ষুধার মাধ্যমে শাস্তি দেওয়ার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এই অপরাধের মধ্যে হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং মানবতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জঘন্য কাজ অন্তর্ভুক্ত।
হামাসের এই নেতা আরও উল্লেখ করেন, গাজায় ত্রাণ সহায়তার প্রবেশ বাধাগ্রস্ত করা এবং সংঘবদ্ধ অপরাধীদের সুরক্ষা দেওয়া যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সমতুল্য। তিনি জানান, হামাস আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সহযোগিতায় দ্রুত ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করতে বৃহত্তর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা
ইসরায়েলি দখলদারদের অপরাধ ও নিষেধাজ্ঞার মুখেও যারা স্বাস্থ্যখাতে কাজ করে যাচ্ছেন, বিশেষত উত্তর গাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আবু জুহরি।
আরব ও ইসলামী বিশ্বের ভূমিকা
আবু জুহরি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের শহীদদের পবিত্র রক্ত ও তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। বরং এটি আমাদের প্রতিরোধ আন্দোলনের জ্বালানি হয়ে থাকবে, যতক্ষণ না ফিলিস্তিনি ভূমি মুক্ত হয়।’
তবে তিনি আরব ও ইসলামী বিশ্বের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা ৪১৫ দিন ধরে চলছে, যা আরব ও ইসলামী বিশ্বের দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় অবস্থানকে তুলে ধরেছে।
এই অবস্থায়, তিনি ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং আরব লীগের প্রতি আহ্বান জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রিয়াদ সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসরায়েলি আগ্রাসন থামানোর জন্য।
তিনি বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের প্রতিও আহ্বান জানান, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অপরাধ থামাতে দখলদারদের ওপর চাপ প্রয়োগ করার মাধ্যমে নিজেদের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ নিতে।
ইসরায়েলি অপরাধ ও প্রতিরোধের আহ্বান
জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন নীতিকে ‘ফিলিস্তিনিদের অধিকারগুলোর চরম লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেন আবু জুহরি। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের বসতি স্থাপন প্রকল্প ও অপরাধ ইতিহাসের সত্যকে পাল্টাতে পারবে না। জেরুজালেম চিরকাল ফিলিস্তিনের রাজধানী থাকবে।’
তিনি আরব ও ইসলামী দেশগুলোর জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান, ৩০ নভেম্বর এবং ১ ডিসেম্বরের প্রতিবাদ কর্মসূচি আরও জোরদার করার জন্য।
পশ্চিম তীর ও অভ্যন্তরীণ ফিলিস্তিনে দখলদারদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও জাতিসংঘের উচিত পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে ইসরায়েলের বসতি স্থাপন প্রকল্পের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
সূত্র: আল-জাজিরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link