১১ বছর বয়সী ইসলাম। তার জীবনটা যেন এক অসমাপ্ত গল্প। দখলদার ইসরায়েলিদের কারণে বাবাকে হারিয়ে ছোট এই ছেলেটি এখন পরিবারের একমাত্র আশ্রয়। জুতা মেরামতের কাজ করে ইসলাম দিন কাটায়। তবুও কারও কাছে হাত পাততে রাজি নয় সে। চোখে তার এক অদম্য স্বপ্ন—একদিন আবার স্কুলে ফিরবে, বাবার মতো গাড়ির বৈদ্যুতিক কাজ শিখবে। যুদ্ধ ইসলামকে তার বয়সের চেয়েও অনেক বেশি পরিণত করে দিয়েছে। কিন্তু তার ভাঙা স্বপ্নগুলো এখনো জীবন্ত।
গাজার আল-ইয়ারমুক শিবিরে শিশুদের জীবনের সবচেয়ে মৌলিক অধিকারগুলোও যেন এক অমূল্য বিলাস। স্কুলব্যাগগুলো এখন উদ্বাস্তুদের ব্যাগ, আর স্কুলগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত। দশ বছরের খালেদ কাঠ সংগ্রহ করছে রান্নার জন্য। সাত বছরের আনাস চুপচাপ বসে আছে, পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারার অসহায়ত্ব নিয়ে। তেরো বছরের লুবনা অবাক হয়ে জানতে চাইছে—শিশু অধিকার নিয়ে যা শিখেছিল, সেগুলো আজ কোথায় হারাল?
দখলদার বাহিনী গাজার শিশুদের শুধু শৈশব নয়, তাদের পরিবারও ছিনিয়ে নিচ্ছে। আব্দুল্লাহ আবু আসি ও তার ভাই ওমর—ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় দখলদার বাহিনীর হাতে। ওমরকে গাজার দক্ষিণে ছেড়ে দিলেও আব্দুল্লাহকে পাঠানো হয় রাফাহ। ১০ দিন পর তারা আবার মিলিত হয়।
একটি ভিড়ঠাসা ক্লিনিকে শোনা যায় হাজারও গল্প। সাত মাস বয়সী লামিস পুরো পরিবারকে হারিয়ে একাই বেঁচে আছে। লামিসের বাড়ি ধ্বংস হয়েছিল আল-সাবরা অঞ্চলে বোমা হামলায়। সে এখন গাজার ১৭ হাজার অনাথ শিশুর একজন।
আরাম, ছোট্ট মেয়েটি, বসে আছে আল-মাদানি হাসপাতালের আঙিনায়, বোনের কবরের পাশে। ফুল গুঁজে দিয়ে, কবরের সাথে কথা বলে সে। তার কষ্টভরা প্রশ্ন—‘ওরা কেন আমার বোনকে নিয়ে গেল? সে তো কোনো ক্ষতি করেনি!’
আরিজ, এক মায়ের করুণ চিত্র। তিনি বসে আছেন তার তিন সন্তানের—হামজা, আবদুল আজিজ, এবং লাইলার—মৃতদেহের সামনে। একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে। আরিজ তাদের নিথর মুখ স্পর্শ করে অশ্রুভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘আজ থেকে কে আমাকে মা বলে ডাকবে?’
গাজার এই গল্পগুলো শুধুই সংখ্যার খাতায় ঠাঁই পাওয়া তথ্য নয়, এগুলো বাস্তব জীবনের বেদনার প্রতিচ্ছবি। যুদ্ধ শুধু জীবন ছিনিয়ে নেয় না, শৈশবকেও নির্মমভাবে ধ্বংস করে। ইসলাম, লুবনা, লামিস বা আরিজ—তারা শুধু গাজার গল্প নয়, তারা পৃথিবীর এক করুণ বাস্তবতার প্রতীক।
সূত্র: আল জাজিরা