একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর, পরে ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী। তবে এই দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের আড়ালে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমানের বিরুদ্ধে।
মহিববুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পরবর্তীতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা করে নেন। ২০০৩ সালে তিনি ধুলাসার ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক উত্থান। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ২০২৪ সালে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান।
সরকারি বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অভিযোগে তোলপাড় চলছে। পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, এমপি থাকাকালীন সময়ে মহিববুর রহমান কোনো কাজ টাকা ছাড়া করতেন না।
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম রাকিবুল আহসান বলেন, এমন কোনো খাত নেই যেখানে দুর্নীতি করেননি। তিনি ভয়ভীতি দেখিয়ে নামমাত্র মূল্যে জমি কিনেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতিমধ্যে মহিববুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী ফাতেমা আক্তারের সম্পদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে পটুয়াখালী জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সম্পাদিত জমির দলিল ও রেকর্ড চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জেলেদের অভিযোগ, কুয়াকাটার উপকূলীয় এলাকায় মাছ ধরার জন্য নিয়মিত চাঁদা দিতে হতো মহিববুর রহমানের লোকজনকে। কুয়াকাটার জেলে আবদুল মালেক জানান, চাঁদা না দিলে মাছ ধরতে পারতাম না। আমারও দুই লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে।
এছাড়া, কলাপাড়া পৌরসভায় সরকারি খাল দখল করে ব্যক্তিগত ভবন নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। খালের ১০–১৫ ফুট জায়গা দখল করে সেখানে সাততলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বরাদ্দ নিজস্ব লোকজনের মধ্যে বিতরণ করেছেন মহিববুর রহমান। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৫টি দুর্যোগ সহনীয় ঘরের বরাদ্দ ছিল, যা মহিববুর তাঁর স্বজন ও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বিতরণ করেছেন।উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, সাবেক এমপি নিজেই উপকারভোগীদের তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন।
এদিকে, ২০১৮ সালের যেই হলফনামায় মহিববুর রহমানের বার্ষিক আয় ছিল ২৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ২০২৪ সালে তা ছয় গুণ বেড়ে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বরগুনা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার বলেন, মহিববুর রহমান আমার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির লোকজনকে পাঁচ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছেন, যা অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে। আমি প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয়নি।
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ বি এম শামসুজ্জামান বলেন, মহিববুর রহমান শুধু দুর্নীতিই করেননি, তিনি দলেরও অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন। তাঁর কারণে দলের ইমেজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মহিববুর রহমান বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি এবং হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগে পাঁচটি মামলা হয়েছে। তবে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মহিববুর রহমানের দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার এবং অবৈধ কার্যক্রমের তদন্ত চলছে। প্রশাসন ও দুদকের যৌথ অভিযান শিগগিরই শুরু হবে।
ডেস্ক রিপোর্ট
- ডেস্ক রিপোর্ট#molongui-disabled-link
- ডেস্ক রিপোর্ট#molongui-disabled-link
- ডেস্ক রিপোর্ট#molongui-disabled-link
- ডেস্ক রিপোর্ট#molongui-disabled-link