নিউজনেস্ট

উত্তর গাজায় তীব্র মানবিক সংকট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা

দুর্ভিক্ষে গাজাবাসী, ইসরায়েলি বাহিনীর সহযোগিতায় ত্রাণের হরিলুট
দুর্ভিক্ষে গাজাবাসী, ইসরায়েলি বাহিনীর সহযোগিতায় ত্রাণের হরিলুট। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার বিশেষত উত্তর অংশে এক ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। এখানে ওষুধ, খাদ্য, জ্বালানি এবং আশ্রয়ের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সংস্থাটি ইসরায়েলকে আরও বেশি পরিমাণে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে এবং সেখানে জরুরি কার্যক্রম সহজতর করার আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বর্তমান পরিস্থিতিকে “দুর্বিষহ” বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

WHO-এর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হলে প্রায় সবাই সরকারি ভবনে আশ্রয় নিয়েছিল অথবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে স্থান নিয়েছিল। তবে এখন বাস্তুচ্যুতদের ৯০ শতাংশই তাঁবুতে দিন কাটাচ্ছে। শীতল আবহাওয়া, বৃষ্টি এবং বন্যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলবে। এতে শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ নানা অসুখ এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মারাত্মক আকার ধারণ করবে।”

বিশেষত উত্তর গাজার অবস্থা আরও ভয়াবহ। এখানে ইসরায়েলি বাহিনী অক্টোবরে একটি বড় সামরিক অভিযান শুরু করে, যার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে।

জাতিসংঘের সহায়তায় প্রস্তুত একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর গাজায় খাদ্য সহায়তা কার্যত বন্ধ। অব্যাহত বোমা হামলা ও সংঘর্ষের কারণে পুরো অঞ্চল দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

এই সপ্তাহে WHO এবং তাদের সহযোগী সংস্থার একটি দল তিন দিনের জন্য উত্তর গাজা পরিদর্শন করেছে। তারা ১২টিরও বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করে জানিয়েছে, সেখানে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত রোগী এবং দীর্ঘমেয়াদী অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘাটতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

তেদ্রোস বলেছেন, “আমরা আমাদের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি—ইসরায়েল যতটুকু অনুমতি দিচ্ছে তার মধ্যে থেকেই।”

WHO-এর ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি রিক বিবারকর্ন জানিয়েছেন, এই মাসে উত্তর গাজায় ২২টি মিশনের অনুমোদনের আবেদন জানানো হয়েছিল, তবে মাত্র ৯টি অনুমোদিত হয়েছে।

আগামী শনিবার উত্তর গাজার দুটি হাসপাতালে একটি মিশন পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। কামাল আদওয়ান ও আল-আউদা নামে এই হাসপাতালগুলো বর্তমানে সীমিত কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে জ্বালানির অভাবে তাদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বিবারকর্ন সতর্ক করেছেন, “জ্বালানি ছাড়া কোনও মানবিক কার্যক্রম সম্ভব নয়।”

তবে সংকটের মধ্যেও কিছুটা ইতিবাচক দিক রয়েছে। WHO এই সপ্তাহে গাজা থেকে ১৭ জন রোগীকে চিকিৎসার জন্য জর্ডানে স্থানান্তর করেছে। এদের মধ্যে ১২ জনকে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে গাজার আরও প্রায় ১২,০০০ রোগী এখনও চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। বিবারকর্ন বলেছেন, “যদি এই ধীরগতিতে কাজ চালিয়ে যেতে হয়, তবে রোগীদের সরিয়ে নিতে আরও দশ বছর সময় লাগবে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে উত্তর গাজার এই মানবিক সংকট কিছুটা লাঘব হয়।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত