দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন। তবে সময়ের সঙ্গে এটি লুটপাটের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে একটি চক্র ১৮ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় ও সম্পদ ভোগদখল করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সম্পদ বৈধ ট্রাস্টির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ জানান, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, দারুল ইহসানের সম্পদ বৈধ ট্রাস্টি মুহাম্মদ ওসমান গনির নেতৃত্বাধীন বোর্ডকে বুঝিয়ে দিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশের সহযোগিতায় দখলদারদের সরানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
১৯৮৬ সালে অধ্যাপক ড. সৈয়দ আলী আশরাফ ‘দারুল ইহসান ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামের শিক্ষার মূলনীতি অনুসারে উচ্চশিক্ষা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে শুরু হওয়া এই ট্রাস্ট পরে দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৯৩ সালে সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মিত হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ উদ্বোধন করেন ভবনটি। তবে সময়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বহিরাগতদের হাতে।
২০০৬ সালে নানকের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাধ্যমে একটি মামলা করে ট্রাস্টের নিবন্ধন বাতিলের চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যেই ধানমন্ডি ও সাভারের ক্যাম্পাস দখল করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ধানমন্ডি থানার পুলিশ কর্মকর্তারা দখল প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছিলেন।
ট্রাস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক সৈয়দ আলী আশরাফ এবং তার ভাই অধ্যাপক সৈয়দ আলী নকী এই ঘটনা সহ্য করতে না পেরে হৃদরোগে মারা যান।
ট্রাস্টির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ফয়জুল কবীর দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে যান। অবশেষে হাইকোর্ট দখলদারদের উচ্ছেদে নির্দেশ দেন। আদালতের রায়ে ট্রাস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানার সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বা সংশ্লিষ্ট অন্যদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি, কারণ তাদের ফোন নম্বর বন্ধ ছিল।
দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্পটি শুরু হয়েছিল উচ্চতর শিক্ষার অঙ্গনে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহারে এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। হাইকোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশনায় সেই অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটার আশা করা হচ্ছে।
ডেস্ক রিপোর্ট
- ডেস্ক রিপোর্ট#molongui-disabled-link
- ডেস্ক রিপোর্ট#molongui-disabled-link
- ডেস্ক রিপোর্ট#molongui-disabled-link
- ডেস্ক রিপোর্ট#molongui-disabled-link