অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনীর বিশেষ ফোর্সের সদস্যদের মধ্যে আফগানিস্তানে যুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের পর আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে গেছে। ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর চার বছরের দীর্ঘ তদন্ত শেষে অস্ট্রেলিয়া স্বীকার করেছে, তাদের সেনারা আফগানিস্তানে ৩৯ জন বেসামরিক আফগান নাগরিক ও বন্দিকে হত্যা করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিচারক মেজর জেনারেল পল ব্রেরিটনের নেতৃত্বে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে আসে, এই হত্যাকাণ্ডগুলো ২০০৬ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে। বিশেষ বাহিনীর ছোট একটি দল আফগান নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তদন্তে জানা যায়, এসব হত্যাকাণ্ড ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছিল। এরপর অপরাধ লুকানোর চেষ্টা করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বকে এই হত্যাকাণ্ড থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কারণ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এই অপরাধগুলি মূলত নিম্ন-স্তরের কর্মকর্তাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। উচ্চপর্যায়ের নেতারা এ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে গেছে। মাত্র তিন সপ্তাহে আফগান যুদ্ধে অংশ নেয়া ৯ জন সেনা আত্মহত্যা করে। তাদের মধ্যে ৮ জন পুরুষ এবং ১ জন নারী। যদিও তাদের সরাসরি অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। কিন্তু, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, তদন্তের ফলাফলের মানসিক চাপই তাদের আত্মহত্যার কারণ হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান জেনারেল অ্যাঙ্গাস ক্যাম্পবেল এই ঘটনায় আফগান জনগণের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে ঘোষণা করেছেন, বিশেষ বাহিনীর ইউনিটগুলো ভেঙে দেওয়া হবে অথবা পুনর্গঠন করা হবে। আফগান মিশনে অংশ নেয়া সেনাদের দেওয়া পুরস্কারও পর্যালোচনা করা হবে।
এটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক অভিযান—যা ২০০১ সালে শুরু হয়ে ২০১৩ সালে শেষ হয়। এই মিশনে মোট ২৫,০০০ সেনা অংশ নেয়। যার মধ্যে ৪০ জন নিহত এবং ২৬১ জন গুরুতর আহত হয়।
সূত্র: আরটি অ্যারাবিক