ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় এক নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে। বিদায় মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারতের কাছে ১১৭ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছেন। এই চুক্তি ভারতকে শক্তিশালী করে তুলছে, বিশেষত সামরিক ক্ষমতায়, যা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে শঙ্কিত করছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংস্থা জানায়, এমএইচ-৬০ আর মাল্টি-মিশন হেলিকপ্টারসহ আধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ভারতের সাবমেরিন যুদ্ধ ক্ষমতা এবং আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ বাড়াবে। পাশাপাশি, এই চুক্তি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক প্রস্তুতি ও বিদেশি অস্ত্র কেনার প্রবণতা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, প্রতিবেশীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করার কৌশলও। বিশেষ করে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের সময় এই চুক্তি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি ত্রিপুরায় বাংলাদেশি নাগরিকদের হয়রানির অভিযোগ এবং সীমান্তে সহিংসতার ঘটনা ইঙ্গিত দেয়, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমেই জটিল হচ্ছে। বাংলাদেশিদের ত্রিপুরায় হোটেলে উঠতে না দেওয়া, ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা এবং আগরতলায় নাজেহালের ঘটনাগুলো কেবল ব্যক্তিগত হয়রানি নয়, বরং কৌশলগত চাপের উদাহরণ হয়ে উঠছে।
এরই মধ্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, সীমান্তে সামরিক শক্তি প্রদর্শন এবং আঞ্চলিক আধিপত্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভারত পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। নতুন অস্ত্র চুক্তি এই প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করবে।
চুক্তির অংশ হিসেবে এমএইচ-৬০ আর হেলিকপ্টারগুলো সাবমেরিন যুদ্ধের জন্য উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ করবে। এগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ এবং জলের নিচের লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে সক্ষম, যা আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বা আক্রমণ উভয়ের জন্য কার্যকর। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের এই পদক্ষেপ প্রতিবেশীদের প্রতি আস্থাহীনতা ও আধিপত্যবাদী মনোভাব প্রকাশ করছে।
বাংলাদেশের সাথে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে ভারতের আচরণ সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। অস্ত্র কেনার পাশাপাশি সীমান্তে ক্রমাগত অস্থিরতা ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপ ভবিষ্যতে বড় সংকটের দিকে ইঙ্গিত দেয়।
বিশ্ব রাজনীতির এই মোড়ে ভারত যদি আঞ্চলিক সহিংসতার পথ বেছে নেয়, তবে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।