বাংলাদেশে বর্তমানে অন্তত আড়াই লাখ অবৈধ বিদেশী অবস্থান করছে, যারা বছরে প্রায় ৩.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচার করছে। একাধিক পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, অবৈধভাবে কোনো বিদেশীকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না। সম্প্রতি এক বৈঠকে তিনি বলেন, সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। একইসঙ্গে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশীদের বৈধ কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে বৈধ বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ১৬৭। এর মধ্যে ভারতীয় নাগরিক ছিলেন সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার ৪৬৪ জন। চীনের নাগরিক ছিলেন ১১ হাজার ৪০৪ জন। টিআইবির একটি জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে বৈধ ও অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশী কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার, যারা বছরে ৩.১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেন।

অনেক বিদেশী ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। তারা আয়কর ফাঁকি দিয়ে নিজ দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। কিছু বিদেশী আবার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সামান্য জরিমানা দিয়ে দীর্ঘদিন অবস্থান করছেন।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত, চামড়া শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশী কাজ করছেন। দেশীয় জনশক্তির দক্ষতার ঘাটতির কারণেই মূলত বিদেশী কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। তবে ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কাজ করায় তারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন এবং অর্থ পাচার করছেন।

অর্থনীতিবিদ ড. মাশরুর রিয়াজ বলেছেন, দক্ষ জনশক্তির অভাবে বাংলাদেশ বিদেশী কর্মীর ওপর নির্ভরশীল। তবে তাদের বৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ না দেওয়ায় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শিল্প মালিক ও বিদেশী কর্মী উভয়ই এর জন্য দায়ী।

সরকার ইতোমধ্যে এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধভাবে কাজ নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *