সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সুপরিকল্পিত উদ্যোগ, সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের আসাদ শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। নেতৃত্বের পুনর্গঠন, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার তাদের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের মূলে ছিল।
নেতৃত্ব ও সংগঠনের পুনর্গঠন
বিদ্রোহীরা তাদের নেতৃত্ব পুনর্গঠন করে অভিজ্ঞ ও দক্ষ সামরিক এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেয়। ২০২০ সালে ইদলিবে একটি কেন্দ্রীয় পরিচালনা কক্ষ স্থাপন করে সামরিক কার্যক্রমকে আরও সুসংগঠিত করে। মুক্ত শহরগুলোতে দ্রুত স্থানীয় বাসিন্দাদের পুনর্বাসন এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হয়।
সরবরাহ লাইন শক্তিশালীকরণ
২০১৬ সালের আলেপ্পোর ঘটনাকে মাথায় রেখে বিদ্রোহীরা মুক্ত এলাকাগুলোর সরবরাহ লাইন শক্তিশালী করে। এর ফলে তারা দীর্ঘমেয়াদী অবরোধ এড়াতে সক্ষম হয়, যা তাদের কৌশলগত সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব ও আদর্শগত সংহতি
বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী একীভূত হয়ে ‘সামরিক পরিচালনা কমিটি’ গঠন করে। এর নেতৃত্ব নেন হায়াত তাহরির আশ শামের নেতা আহমদ শারআ, যিনি ‘আল জোলানি’ নামে পরিচিত। মতাদর্শগত বিভাজন দূর করে তারা একক বিপ্লবী পতাকার অধীনে এগিয়ে যায়, যা তাদের ঐক্যকে শক্তিশালী করে।
অস্ত্র উৎপাদন ও প্রযুক্তির ব্যবহার
২০১৯ সালের সংঘর্ষ কমার পর বিদ্রোহীরা অস্ত্র উৎপাদনে মনোযোগ দেয়। পুরনো অস্ত্রের পুনর্ব্যবহার এবং স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে তারা আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ‘শাহিন ব্রিগেড’ ড্রোন পরিচালনার দক্ষতা অর্জন করে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সদ্ব্যবহার
রাশিয়া এবং ইরানের দুর্বলতাকে বিদ্রোহীরা কৌশলগতভাবে কাজে লাগায়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের ঘাটতিতে পড়ে। অন্যদিকে ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে হিজবুল্লাহ তাদের সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকা থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
জনসমর্থন ধরে রাখা
বিদ্রোহীরা সহনশীল যুদ্ধনীতি গ্রহণ করে জনগণের সমর্থন ধরে রাখে। তারা সরকার-সমর্থিত এলাকায় হামলার পরিবর্তে মুক্ত এলাকাগুলোতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে মনোযোগ দেয়। সেনা সদস্যদের পক্ষত্যাগে উৎসাহ প্রদান এবং আত্মসমর্পণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে।
ন্যায়ভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠা
মুক্ত এলাকাগুলোতে একটি ন্যায়ভিত্তিক বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা ভবিষ্যতের সিরিয়ার জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।
সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সুপরিকল্পিত উদ্যোগ, ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব, এবং প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে শুধু আসাদ সরকারের পতন ঘটেনি, বরং সিরিয়ার রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। তাদের এই সাফল্য ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে।
সূত্র: আরাবি ২১
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link