যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার ফিলিস্তিনিরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নিজেদের উপকূলীয় পর্যটনশিল্প তারা নিজেরাই গড়ে তুলবেন। হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে পুরো গাজা পুনর্নির্মাণে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই পরিকল্পনাও তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে গাজাকে জনশূন্য করে বিলাসবহুল নগরী বানানোর কথা বলা হয়েছে।
গাজার প্রতিরোধ ও প্রতিজ্ঞা
১৫ মাস ধরে ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। তবু ফিলিস্তিনিরা আশাহত নন। এক সময় অবরোধের মধ্যেও তারা স্থানীয় পর্যটনশিল্প গড়ে তুলেছিলেন। এবারও নিজেরাই নিজেদের ভূমি পুনর্গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন।
গাজার বাসিন্দা আসাদ আবু হাসেইরা ট্রাম্পের পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘কোনো কিছু পুনর্নির্মাণ অসম্ভব নয়। আমরা নিজেরাই গাজা গড়ে তুলব।’ তিনি জানান, পুনর্নির্মাণের আগেই তার রেস্তোরাঁ চালু করে খাবার পরিবেশন শুরু করবেন।
গাজার আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু হাসেইরাও একই সুরে বলেন, ‘আমার রেস্তোরাঁ আগের চেয়েও ভালো অবস্থায় ফিরে আসবে।’ তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘গাজায় তো আগে থেকেই রেস্তোরাঁ-হোটেল ছিল। তাহলে এগুলো ধ্বংস করার কী প্রয়োজন ছিল? আর এখন কেন নতুন করে নির্মাণ করতে হবে?’
গাজাবাসী স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা আরব ছিলাম, আরবই থাকবো। আমাদের ইতিহাস কখনো বিদেশিদের ইতিহাস দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে না।
গাজাকে জনশূন্য করার পরিকল্পনা
১৯৪৮ সালের ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়ের পর থেকে ফিলিস্তিনিদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্যোগ চলছে গাজায়। ইসরায়েলের হামলায় ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। দখলদার ইসরায়েল গোটা গাজাকে ধ্বংস করার পর এখন মার্কিন নেতৃত্বাধীন শক্তি সেখানে নতুন পরিকল্পনা করছে ।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানানো হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি মূলত তার জামাতা জ্যারেড কুশনারের পুরোনো প্রস্তাবের পুনরাবৃত্তি। তবে এই পরিকল্পনা বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছে। সমালোচকদের ভাষ্য, এটি ‘জাতিগত নির্মূলের’ শামিল এবং আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী।
ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাখ্যান
গাজার ফিলিস্তিনিরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, নিজেদের ভূমি ছেড়ে তারা অন্য কোথাও যাবেন না। বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত হলেও তারা ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছেন।
‘আমরাই আমাদের পর্যটনশিল্প গড়ে তুলব’ বলে জানিয়েছেন গাজার এক ব্যবসায়ী। তার মতে, বাইরের কারও পরিকল্পনা এখানে বাস্তবায়িত হবে না।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বলা হচ্ছে, গাজার ভূমি ফিলিস্তিনিদেরই থাকবে। তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই গড়ে নেবেন।
সূত্র: রয়টার্স