নিউজনেস্ট

কাশ্মীরে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে মুসলিম যুবকের আত্মহত্যা!

কাশ্মীরে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে মুসলিম যুবকের আত্মহত্যা!
কাশ্মীরে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে মুসলিম যুবকের আত্মহত্যা। ছবি : মুসলিম মিরর

কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ২৫ বছর বয়সী এক মুসলিম যুবক। মৃত্যুর আগে এক মর্মান্তিক ভিডিও বার্তায় তিনি পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযোগ তুলে গেছেন।

মাখন দিন নামের ওই যুবক আত্মহত্যার আগে একটি মসজিদের ভেতরে ভিডিও রেকর্ড করেন। সেখানে তিনি মাথায় পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে শপথ করে বলেন, তার কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, ‘বিলাওয়ার থানার এসএইচও আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। থানায় নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে আমাকে পেটানো হয়েছে। জোর করে আমার থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করতে চাওয়া হয়েছে। আমি এই লাঞ্ছনা সহ্য করতে পারছি না। তাই আমি আত্মহত্যা করছি, যাতে আমার মতো আর কেউ এমন নির্যাতনের শিকার না হয়।’

মাখন দিনের মৃত্যুর ঘটনায় কাশ্মীরজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। জম্মু-সাম্বা-কাঠুয়া রেঞ্জের ডিআইজি শিব কুমার শর্মা এ নিয়ে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্যদিকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকেশ মিনহাস এ ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেন এবং পাঁচ দিনের মধ্যে সাক্ষ্য-প্রমাণসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলেন।

তবে পুলিশ দাবি করেছে, মাখন দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল এবং পরে তিনি নিজ বাসায় কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন।

পুলিশ আরও দাবি করেছে, মাখন দিন পাকিস্তানে থাকা এক গেরিলা যোদ্ধার আত্মীয় এবং গত বছরের বাদনোতা হামলায় জড়িত ছিলেন, যেখানে চারজন ভারতীয় সেনাসদস্য নিহত হয়।

কিন্তু মাখন দিনের ভিডিও বার্তায় এসব অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

মাখন দিনের মৃত্যুতে এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। তবে ক্ষোভ দমাতে কাঠুয়া ও আশপাশের এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘মাখন দিন কেবল একজন নিরীহ মুসলিম যুবক ছিলেন। পুলিশের তৈরি করা মিথ্যা মামলায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতারা এই ঘটনাকে ‘রাজ্য দমননীতির’ ভয়ংকর দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

পিডিপি সভাপতি ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘কাঠুয়ায় পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে এক নিরপরাধ যুবকের মৃত্যু আসলেই অনেক হৃদয়বিদারক। এছাড়া এভাবে মিথ্যা অভিযোগে মুসলিমদের আটক, নির্যাতন ও হত্যা করা হচ্ছে। এটা কখনও সহ্য করার মতো নয়।

এদিকে মাখন দিনের মৃত্যুর দিনই কাশ্মীরের বারামুল্লায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন ৩২ বছর বয়সী ওয়াসিম মজিদ মীর।

পুলিশ জানায়, তার ট্রাক চেকপয়েন্টে থামতে বলেন সেনাসদস্যরা। তিনি না থামালে চাকার দিকে গুলি ছোড়া হয়, কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার শরীরে লাগে। ফলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওয়াসিমের।

একই দিনে দুই মুসলিম যুবকের এই মর্মান্তিক মৃত্যু কাশ্মীরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দিন যতই যাচ্ছে মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন আরও তীব্র হচ্ছে এবং নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আদৌ হবে তো?

নিউজনেস্ট ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত