الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونؤمن به ونتوكل عليه. ونعوذ بالله من شرور انفسنا ومن سيئات اعمالنا. من يهده الله فلا مضل له ومن يضلله فلا هادي له. واشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له واشهد ان محمدا عبده ورسوله وخاتم انبيائه ورسله. صلى الله عليه وعلى اله وصحبه وسلم تسليما كثيرا كثيرا.
اعوذ بالله من الشيطان الرجيم. بسم الله الرحمن الرحيم. يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا تَعْمَلُونَ.
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মেহেরবানী, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমাদের জন্য নেক আমলের আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য অনেক দরজা আল্লাহ তায়ালা খুলে রেখেছেন। কিভাবে বান্দা আল্লাহর নিকটে যেতে পারে, আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে, জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারে, জান্নাতের অধিকারী হতে পারে, সেজন্য আল্লাহ তায়ালা নেক আমলের অনেক রাস্তা খুলে দিয়েছেন।
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় এবং সবচেয়ে জরুরী বিষয় হল, ফরজ আদায় করা এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকা। এ কথা আমাদের খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং স্মরণ রাখতে হবে। আল্লাহর কাছে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সবচেয়ে প্রিয় মাধ্যম হল এবং সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরী সেটা হল, ফরজ। ফরজ আদায় করা, আল্লাহ যা ফরজ করেছেন, তা আদায় করা। আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা থেকে বেঁচে থাকা।
আমরা ধারণা করি কি, ফরজ লঙ্ঘন হলে হোক, হারাম করছে পাপ বিভিন্ন অপরাধ পাপাচার হইতে থাকুক, শবে বরাতে সব মাফ নিয়ে নিব! আছে না একটা ধারণা? পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ এটা দৈনিক সব সময়ের আমল। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। সে নামাজের গুরুত্ব দিচ্ছে না। কবিরা গুনাহ বড় বড় পাপ, সেগুলো থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে আমি যত্ন নিচ্ছি না, উদাসীন।
কিন্তু শবে বরাতে একেবারে উপচে পড়া ভিড় মসজিদে! সেটার মানে কি? এটার মানে হল আমি নফলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চাচ্ছি, ফরজ বাদ দিয়ে! ফরজ বাদ দিয়ে এবং গুনাহের কাজ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করব নফল এর মাধ্যমে, এটা অসম্ভব! অসম্ভব কথা! শবে বরাত একটি বরকতপূর্ণ রাত, ফজিলতের রাত। কিন্তু এর মানে এটা না যে, আমি পুরো বছর উদাসীন থাকবো, ফরজের ব্যাপারে উদাসীন থাকবো, গোনাহ থেকে বাঁচার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে থাকবো, বান্দার হক নষ্ট করতে থাকবো, আল্লাহর মাখলুকের উপর জুলুম করতে থাকবো, আর শবে বরাতে মসজিদে এসে ইমাম সাহেবের সঙ্গে একটা মোনাজাত দিয়ে দিব, আর আমার সব কিচ্ছা শেষ! না, এটা ইসলামের শিক্ষা না!
ইসলামের শিক্ষা হলো, তুমি ফরজ আদায়ের ব্যাপারে যত্নবান হও। ফরজের ব্যাপারে যত্নবান হও ফরজ আদায় কর, আল্লাহ যা ফরজ করেছেন, তা আদায় করো। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ, রমজানের ফরজ রোজা, যাকাত, হজ-যার সামর্থ্য আছে এবং যে অঙ্গনে যা ফরজ। মানব জীবনের যে অঙ্গনে যে শাখায় আল্লাহ তায়ালা যা ফরজ করেছেন। যেমন আমি যদি চাকরি করি তাহলে চাকরিজীবী হিসেবে আমার ফরজ হলো, আমি চাকরির হক আদায় করা, ওখানে কোন খেয়ানত না করা, যতটুকু সময় আমার দায়িত্ব আমার ডিউটি শুরু থেকে শেষ ঠিক সময়ে যাওয়া এবং পুরো সময় থেকে তারপরে বের হওয়া। দেরি করে যাব আগে আগে বের হয়ে যাব এটা গলদ তরিকা। এটা ছেড়ে দিলে ফরজ লঙ্ঘন হলো। এবং যতক্ষণ সেখানে আছি আন্তরিকতার সাথে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব, এটা ফরজ। ব্যবসার মধ্যে এরকম ফরজ আছে।
এরকমভাবে মানব জীবনের প্রত্যেকটি অঙ্গনে আল্লাহ কিছু আমল ফরজ করেছেন কিছু জিনিস হারাম করেছেন। হারামটা থেকে বাঁচতে হবে, ফরজটা আগে আগে করতে হবে। হারাম থেকে বেঁচে থাকা এবং ফরজ আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়। এর পরে হলো নফল। নফল দিয়ে ফরজের ঘাটতি পুরা করা। ফরজ নাই, তাহলে ঘাটতি পূরণ করবেন কিসের?! যদি আমি আদায় করি ফরজ, তাহলে ওখানে কি কি ত্রুটি থেকে গেছে বেখেয়ালে, সেটা পূরণ হবে নফল এর মাধ্যমে। আমি যদি ফরজ লঙ্ঘন করেই চলি, তো এখানে ঘাটতি পূরা হওয়ার কি হলো? এটা নফল কে ভুল ব্যবহার করা। এটা নফল কে ভুল ব্যবহার করা।
এটা হলো মনে করেন, বিল্ডিং করলেন ফাউন্ডেশন হয়েছে সবকিছু হয়েছে এখন রং লাগাচ্ছেন না আরকি। নফল হলো রং লাগানো। হাওয়ার ওপরে যদি আমি রং লাগাই তো হবে? তাহলে আমার ঈমানের জিন্দেগি থাকতে হবে, আমার তাকওয়ার জীবন থাকতে হবে আমার মধ্যে। আকিদা বিশ্বাস, ঈমানী জিন্দেগি, সবকিছুর মধ্যে ফাউন্ডেশন থাকতে হবে। তো এই ফরজ হলো ফাউন্ডেশন। গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা হারাম থেকে বেঁচে থাকা এটা ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের উপরে আপনি আছেন, তো এবার আপনি উঠে যেতে পারেন। এটা হল নফল। এটা হল শবে বরাত।
শবে বরাত তো বছরে একবার। প্রতি রাত প্রতি রাতই কি শবে বরাত নয়? শবে বরাত বছরে একবার এই কথা ঠিক আছে। শবে বরাতের যে বরকত আর ফজিলত, সেটা পাওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা বছরে একবার আমাদেরকে সুযোগ দেন, না প্রতিরাতেই সুযোগ দেন? প্রতিরাতেই সুযোগ দেন। শবে বরাত আর অন্য রাতের পার্থক্য হল, শবে বরাতে এ সময়টা শুরু হয় সূর্য ডোবার পর থেকেই মাগরিবের সময় হওয়া থেকে শুরু হয় সুবহে সাদিক পর্যন্ত, পুরো সময়। কিন্তু পুরো বছরের প্রতিটি রাতের মধ্যে বিশেষ বরকত বিশেষ মাগফেরাত বিশেষ রহমতের মুহূর্ত আসে, যদিও সেটা মাগরিবের সময় থেকে ফজর পর্যন্ত পুরো রাতের ব্যাপারে, এরকম নয়। কিন্তু সেটা প্রতি রাতে বিশেষ রহমত বিশেষ মাগফিরাতের মুহূর্ত আসে। বলেন, আলহামদুলিল্লাহ।
প্রতিরাতই আসে। প্রতি রাতেই দোয়া কবুল হয়। শেষ রাতের দিকে বিশেষ রহমতের সময় না ওটা? এখানে (শবে বরাতের ব্যাপারে) যেমন আছে যে, জমিনবাসীর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি হয়, আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করেন। তো প্রতি রাতের ব্যাপারেই তো সহিহ হাদিসে আছে। শবে বরাতের যে সহিহ হাদিস আমি গত জুমায় পড়েছি তা সহিহ ইবনে হিব্বান থেকে। কিন্তু এর চেয়ে সহিহ সনদ এবং অনেক সনদে বর্ণিত সহিহ হাদিস হলো, প্রতি রাতে। সুবহানাল্লাহ।
একটা সময় আসে রাতের শেষের দিকে অর্ধ রাত যাওয়ার পরে আল্লাহর পক্ষ থেকে আহ্বান হতে থাকে বান্দার প্রতি: কে আছো? কি চাও? কার মাগফেরাতের দরকার, আমি মাগফেরাত করতে, ক্ষমা করতে প্রস্তুত! কার রহমতের দরকার, আমি রহমত বর্ষণ করতে প্রস্তুত! কার রিজিকের দরকার, কার কি দরকার বলো? هل من سائل فاعطي? আছে কোন প্রার্থনাকারী, আমি তো দিতে প্রস্তুত! প্রতি রাতে! আর আমরা প্রতি রাত ঘুমাতে থাকি সারা রাত! বছরে একবার শবে বরাত পালন করি! এই পালনটা কেমন পালন করি সেটা আরেক প্রসঙ্গ, সেটা একটু পরে বলছি। যদি মনে থাকে আল্লাহ তাওফিক দেন।
প্রতি রাত আল্লাহ আমাদেরকে মওকা দিয়ে দিয়েছেন। এজন্য প্রতি বছর উদাসীন থেকে শবে বরাত পালন এটা মুমিনের কাজ হইতে পারে না! শবে বরাত পালন সহি তরিকায় পালন করা এটা মুমিনের কাজ। কিন্তু উদাসীন থাকা মুমিনের কাজ? পুরো বছর উদাসীন থাকা কি মুমিনের কাজ? এবং শবে বরাতের এই নেয়ামতকে অপব্যবহার করা, ভুল ব্যবহার করা, এটা কি মুমিনের কাজ হইতে পারে, কখনোই না! এ দুইটা কথা মনে রাখতে হবে। শবে বরাত বছরে একবার হলেও যে বরকত যে মাগফিরাত শবে বরাতে পাওয়া যায়, সে বরকত মাগফেরাতের জন্য আল্লাহ তায়ালা পুরো বছরই আমাদের দরজা খুলে রেখেছেন। পার্থক্য হল, শবে বরাত সূর্য ডোবা থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। আর অন্য রাত হয়তো পুরো রাতের ব্যাপারে এরকম ঘোষণা নেই; কিন্তু ওখানেও প্রতি রাতে বিশেষ মুহূর্তে বিশেষ রহমত ও বিশেষ ফজিলতে আসে।
শেষ রাতে উঠে দোয়া করুন। প্রতিরাতেই তো শেষ রাত রয়েছে, যা সাহরির সময়। অনেক সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শেষ রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের উদ্দেশ্যে বিশেষ ঘোষণা দেন: ‘বান্দা, তুমি কি চাও? মাগফিরাত চাও, রহমত চাও, রিজিক চাও, নাকি অন্য কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য দোয়া করছ? যা চাও, তাই চাও!’
এই সময়ে বান্দা নিজের প্রয়োজনে দু’রাকাত নামাজ পড়ে, দোয়া করে, তেলাওয়াত করে। এটা প্রতি রাতের বিষয়। আমি আমার প্রয়োজনে দোয়া করছি, তেলাওয়াত করছি, নফল ইবাদত করছি, জিকির ও ইস্তেগফার করছি। আল্লাহ তাআলা এটাকে ঋণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কে আল্লাহকে ঋণ দেবে? সেই সত্তাকে, যার কোন অভাব নেই এবং তিনি কখনো জুলুম করেন না।’
আল্লাহর কোন অভাব নেই। তিনি কখনো কারো প্রতি জুলুম করেন না। তাই আল্লাহকে ঋণ দিলে কোন ভয় নেই। এই ঋণের বদলা আপনি অবশ্যই পাবেন। আল্লাহর জন্য ইবাদত করি আমার স্বার্থে, কিন্তু আল্লাহ এটাকে ঋণ হিসেবে গণ্য করেন। আপনি যদি আল্লাহকে দু’রাকাত নামাজ দান করেন, আল্লাহ তা হাজার গুণে বাড়িয়ে আপনাকে ফেরত দেবেন। তিনি কখনো জুলুম করেন না।
মানুষকে ঋণ দিতে আমরা ভয় পাই। কারণ, সে যদি অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে বা জুলুম করে ঋণ না দেয়। কিন্তু আল্লাহকে ঋণ দিতে ভয়ের কোন কারণ নেই। আল্লাহর কোন অভাব নেই। তিনি কখনো জুলুম করেন না। আল্লাহকে ঋণ দিলে আপনি অবশ্যই তা ফেরত পাবেন। শুধু তাই নয়, আল্লাহ তা বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন। আখেরাতে তিনি এই ঋণ হাজারো, লাখো, কোটি গুণে বৃদ্ধি করে দেবেন।
আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতে আমাদের আহ্বান করেন, যেন আমরা নফল নামাজ পড়ি, দোয়া করি, ইস্তেগফার করি, দুরুদ শরিফ পড়ি এবং যেকোন নেক আমল করে আল্লাহকে ঋণ দিতে থাকি। এই আমলগুলো আল্লাহর কাছে জমা হতে থাকবে এবং তিনি তা সংরক্ষণ করে আখেরাতে বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেবেন।
প্রতি রাতে আল্লাহ এভাবে বান্দাকে আহ্বান করেন। শুধু রাতই নয়, দিনের বিভিন্ন সময়েও আল্লাহর রহমতের দরজা খোলা থাকে। যেমন, চাশতের সময়, জোহরের সময় যখন সূর্য ঢলে যায়, তখনও আল্লাহর রহমতের বিশেষ সময়। এই সময়ে যদি নফল নামাজ পড়া হয়, তা আল্লাহর রহমত লাভের বিশেষ সুযোগ। জুমার দিনের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, এই সময়গুলোতে দোয়া করলে তা কবুল হয়।
এভাবে প্রতিদিন, প্রতিরাতে আল্লাহ চান যে বান্দা উঠে দোয়া করুক, হিম্মত করে দু’চার রাকাত নামাজ পড়ুক এবং আল্লাহর দরবারে মাগফিরাতের দোয়া করুক। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হলো দু’রাকাত করে পড়ে দোয়া করা। যেমন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার মা-বাবাকে ক্ষমা করুন, আমার সন্তানদের ক্ষমা করুন।’ ঘুম ভাঙলে অজু ছাড়াই মাগফিরাতের দোয়া করা যায়।
শুধু বছরে একবার নয়, প্রতিরাতেই আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত পাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। শুধু শবে বরাতের মাধ্যমে নয়, বরং আল্লাহর ফরজ ইবাদত আদায়ের মাধ্যমে, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে, বান্দার হক নষ্ট না করার মাধ্যমে, জুলুম না করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করব। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন।
শবে বরাত পালনের দুটি পদ্ধতি রয়েছে: একটি সহিহ পদ্ধতি, অন্যটি ভুল পদ্ধতি। সহিহ পদ্ধতি হলো, শবে বরাতকে মাগফিরাতের রাত হিসেবে গণ্য করে তাওবা ও নেক আমলের মাধ্যমে রাতটি কাটানো। যতক্ষণ সম্ভব ইবাদত করা।
শবে বরাত অন্যান্য রাতের মতোই একটি রাত। এ রাতেও মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ রয়েছে। মাগরিব ও এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা প্রতিদিনের সুন্নত। ফজরের নামাজ মসজিদে আদায় করাও প্রতিদিনের আমল। শবে বরাতের নামে যদি কেউ সারারাত জেগে থেকে ফজরের নামাজ মসজিদে পড়তে না যায়, তাহলে তা ভুল পদ্ধতি। আগের নিয়মিত আমল ঠিক রাখা জরুরি।
শবে বরাতকে কেন্দ্র করে অনেক প্রথা প্রচলিত রয়েছে, যেমন আতশবাজি ফোটানো, কবরস্থানে ঘোরাফেরা করা, ইত্যাদি। এসব প্রথা শবে বরাতের বরকত নষ্ট করে। কবরস্থানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং আপনি নিজের জায়গায় থেকে দোয়া করতে থাকুন।
দুর্বল সনদে বর্ণিত আছে, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শবে বরাতে ‘বাকি’ কবরস্থানে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কাউকে এ আমলের জন্য বলেননি। কবর জিয়ারত আখেরাতের স্মরণের জন্য, উৎসবের মতো নয়। মহিলাদের পর্দা ছাড়া কবরস্থানে যাওয়া ঠিক নয়।
শবে বরাতের সঠিক আমল হলো তাওবা, ইস্তেগফার, নফল নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে রাতটি কাটানো। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই পবিত্র রাতের বরকত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
শবে বরাতে মসজিদে একত্রিত হওয়া সুন্নত নয়, ইবাদত করুন ঘরে ঘরে
শবে বরাত উপলক্ষে সকল প্রকার মুনকার ও বিদআত কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব। জুমার বয়ানে তিনি বলেন, শবে বরাত উপলক্ষে আমরা যে মসজিদে একত্রিত হয়েছি, এটা কোন সুন্নত কাজ নয়। এই রাতে নিজের ঘরে ইবাদত করুন, নিজের ঘরকে জীবন্ত করুন। নিজের ঘরে নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও ইস্তেগফার পড়তে থাকুন।
তিনি বলেন, ‘মসজিদে এসে মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া যায় এবং দীনি কোন কাজে শরিক হওয়া যায়, এতে কোন সমস্যা নেই। তবে শবে বরাত কেন্দ্রিক মসজিদে একত্রিত হওয়া বা একত্রিত হয়ে ইবাদত করা শরিয়তের সঠিক পন্থা বা সুন্নত নয়।’
শবে বরাত উপলক্ষে মসজিদে একত্রিত হওয়া সুন্নত নয়
অনেকেই শবে বরাতে মসজিদে একত্রিত হওয়ার বিষয়ে কঠিন মন্তব্য করেন। কেউ কেউ এটাকে ‘গুনাহের কাজ’ বলেও আখ্যা দেন। খতিব সাহেব বলেন, ‘এমন বাড়াবাড়ি করাও ঠিক নয়। কোন কিছু সমাধান করতে গিয়ে বা কোন কিছুর প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করাও উচিত নয়। শবে বরাত উপলক্ষে মসজিদে রাতযাপন করা গুনাহের কাজ নয়, তবে এটি কোন সুন্নত আমলও নয়।’
তিনি বলেন, ‘এটি কোন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। হাদিস দ্বারা যা প্রমাণিত তা হলো: এই রাত মাগফিরাতের রাত। তাই এই রাতে মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা উচিত। যদি মসজিদে একত্রিত হয়ে শবে বরাত পালন করার কোনো বিধান থাকতো, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম এটি পালন করতেন। কিন্তু তাঁদের কেউ শবে বরাত উপলক্ষে মসজিদে একত্রিত হয়ে ইবাদত করেছেন, এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কাজেই এটি যত কম করা যায়, ততই ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিজে নিজে দীর্ঘ নফল নামাজ পড়ুন, কোরআন তেলাওয়াত করুন, ইস্তেগফার পড়ুন। নফল নামাজের কেরাত দীর্ঘ করুন, রুকু-সিজদা দীর্ঘ করুন, এটি খুব ভালো হবে। দীর্ঘ তাসবিহাত পড়ুন, নফল নামাজে বেশি বেশি দোয়া করুন। নফল নামাজের সিজদায় আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। তবে এটি নিজে নিজে ঘরে বসেও করা যায়।’
গুনাহ থেকে মুক্তির সংকল্প
শবে বরাত উপলক্ষে যারা ফরজ নামাজে উদাসীন, অনেক গুনাহের কাজে লিপ্ত, তারা ইস্তেগফার করতে পারেন এবং সেই ইস্তেগফারের ওপর অটল থাকতে হবে। মনে মনে সংকল্প করুন—আজকের রাতে তাওবা করলাম, কাল থেকে যে গুনাহের কাজ থেকে তওবা করেছি, সেই গুনাহের কাজ আর কখনো করব না।
তিনি বলেন, ‘শবে বরাত বলেন বা শবে কদর বলেন, অবশ্যই শবে কদরের রাতের মর্যাদা শবে বরাতের রাতের চেয়ে বেশি। কিন্তু অনেকেই উল্টো মনে করেন। তবে শবে বরাত বা শবে কদর যেকোন রাতেই কারও ওপর জুলুম করা যাবে না। কারও হক নষ্ট করা হলে তা আদায় করতে হবে বা কাফফারা দিতে হবে এবং তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’
জুলুম ও হক নষ্টের শাস্তি
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর মাখলুকের ওপর জুলুম করে, কারও হক নষ্ট করে যত লম্বা মোনাজাতই করুন না কেন, তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। তওবা দ্বারা গুনাহ মাফ হয়, তবে তওবার দ্বারা অন্যের হক আদায় হয় না বা মাফ হয় না। কারও থেকে ঋণ নিয়ে তা আদায় না করা হলে, তা পরিশোধ করতে হবে। মিরাসের সম্পত্তি থেকে বোন, ফুপু বা অন্য কারও হক আদায় করা না হলে, তা আদায় করতে হবে। কারও সঙ্গে অন্যায় করা হলে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’
‘আল্লাহর দরবারে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও সাধারণ মানুষ—সবাই সমান। রাষ্ট্রপ্রধানও আল্লাহর প্রতিনিধি, রাসূলের প্রতিনিধি। এজন্য আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছিলেন, ان اقواكم عندي ضعيف অর্থাৎ, ‘তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে শক্তিশালী, সে আমার কাছে দুর্বল। যদি সে জুলুম করে, তাহলে সে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি দুর্বল। আমি তাকে ভয় করব না, তাকে অন্য কারও ওপর জুলুম করতে দিব না। সে যদি কারও হক নষ্ট করে, তাহলে আমি তার থেকে সেই হক আদায় করে প্রকৃত হকদারকে দিয়ে দেব। সে যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, যদি জালেম হয়, তাহলে সে আমার কাছে দুর্বল।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি কেউ দুর্বল হয়, একেবারে দুর্বল হয় এবং সে যদি মাজলুম হয়, তাহলে সে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। সেই দুর্বল ব্যক্তি যদি মাজলুম হয়, তাহলে সে যতই দুর্বল হোক না কেন, সে আমার কাছে শক্তিশালী। আল্লাহর দরবারেও এই বিচারই হবে।’
জালিমের ক্ষমা পাওয়ার শর্ত
তিনি বলেন, ‘যদি কেউ জালেম হয়, তাহলে সে যত বড়ই শক্তিশালী হোক না কেন, আল্লাহর কাছে তার কোনো মূল্য নেই। আর যদি কোন দুর্বল ব্যক্তি মাজলুম হয়, তাহলে সে আল্লাহর কাছে অনেক মূল্যবান। সে যদি কোন দোয়া করে, তাহলে আল্লাহ তার দোয়া মূল্যায়ন করেন। জালেম ব্যক্তি আল্লাহর কাছে একজন আসামি। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় হোক বা আখেরাতে হোক, কিংবা উভয় জগতে তার প্রতিশোধ নেবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না। এটি মনে রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শবে বরাতের রাতে মসজিদে এসে কান্নাকাটি করবেন, কিন্তু জুলুম ছাড়বেন না—এটি হবে না। জালিম ও ইনসাফওয়ালা কখনো আল্লাহর কাছে সমান হতে পারে না। যে জালিম, সে যদি আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করে আর যে মাজলুম, সেও যদি মোনাজাত করে, তাহলে আল্লাহ কার দোয়া কবুল করবেন? জালেমের প্রথম কাজ হলো তওবা করে জুলুম থেকে ফিরে আসা। এরপর জুলুম করে যাদের হক নষ্ট করেছে, তাদের ক্ষতিপূরণ আদায় করা এবং তাদের কাছ থেকে মাফ চাওয়া। তারপর আল্লাহর মাফ পাওয়ার আশা করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘তবে কোন জালিম যদি আল্লাহর কাছে কাঁদে এবং আল্লাহ যদি মাজলুমের অন্তর নরম করে দেন, আর সেই মাজলুম যদি তাকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে সেটি হতে পারে। কান্নার একটা মূল্য আছে। তবে যদি কেউ মনে করে, জুলুম করব আর কান্নাকাটি করব—এটি কখনো সম্ভব নয়। এভাবে মাফ পাওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন। সকল বরকতময় সময়কে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।’
واخر دعوانا الحمد لله رب العالمين