নিউজনেস্ট

বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের আগ্রাসন, বাড়ছে উত্তেজনা

বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের আগ্রাসন, বাড়ছে উত্তেজনা
বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের আগ্রাসন, বাড়ছে উত্তেজনা। ছবি : সংগৃহীত

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) প্রতিনিয়ত বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তে গুলি চালিয়ে হত্যা, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ও বিভিন্ন উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে বাহিনীটি।

সর্বশেষ কুড়িগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশের প্রতিবাদের মুখে ভারতীয় বাহিনী শূন্যরেখায় স্থাপন করা সিসি ক্যামেরা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে সীমান্তে বিএসএফের আগ্রাসন থামছে না। সাম্প্রতিক সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, নওগাঁ, ফেনী ও ঝিনাইদহ সীমান্তে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ও উত্তেজনামূলক কার্যক্রম চালিয়েছে তারা।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যানুসারে, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ৬১৭ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১,১০০ জনের বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতীয় বাহিনীর বিতর্কিত ‘শ্যুট অন সাইট’ নীতি এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতার কারণেই এমন হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।

২০১১ সালে কিশোরী ফেলানী খাতুনকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। তার নিথর দেহ সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকার দৃশ্য বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় তোলে। এরপরও সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধ হয়নি।

সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট ও ফেনী সীমান্তে বিএসএফ বেআইনিভাবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা চালায়। বিজিবির বাধার মুখে একাধিক স্থানে তাদের পিছু হটতে হয়। কিন্তু সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে এখনো এ ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রঘুনাথপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি কৃষক নিহত হন। জানুয়ারিতে মাত্র আট দিনের ব্যবধানে দুজন বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়। ফেনীর পরশুরাম সীমান্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ মেরামতে বাধা দেয় বিএসএফ। একই সময় ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিজিবির কাজে বাধা দেওয়া হয়।

লালমনিরহাটের দহগ্রাম সীমান্তে ১৫ জানুয়ারি বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়ার ওপর কাচের বোতল ঝুলিয়ে রাখে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

সামরিক বিশ্লেষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বলেছেন, ‘সীমান্তে হত্যা বন্ধে পাল্টা গুলিই একমাত্র সমাধান। বিএসএফকে বার্তা দিতে হবে— এনাফ ইজ এনাফ!’

বিজিবির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিষয়ে কঠোর বার্তা দেবে বলে জানা গেছে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. উমর ফারুক বলেছেন, ‘সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘বিএসএফের ‘দেখামাত্র গুলি’ নীতি বাতিল করতে হবে। ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করলে বিজিবি তাদের হত্যা করে না, গ্রেপ্তার করে। তাহলে বিএসএফ কেন বাংলাদেশিদের নির্বিচারে হত্যা করছে?’

বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের আগ্রাসন চলমান থাকলেও এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নিউজনেস্ট ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত