কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। ছবি : সংগৃহীত

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আবারও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সূর্যশক্তি চালিত ব্যাটারি বিস্ফোরণের ফলে ৯ নম্বর শিবিরে আগুন লাগে। স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে এতে দুটি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পরপরই শিবিরের বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবকরা দ্রুত আগুন নেভানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাদের তৎপরতার ফলে আগুন আর বড় আকার ধারণ করতে পারেনি। তবে শিবিরের ঘনবসতি ও দুর্বল নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়ছে, যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ড নতুন কিছু নয়। অত্যধিক জনসংখ্যার চাপ, অস্থায়ী ঘরবাড়ি ও দাহ্য বস্তু ব্যবহারের কারণে প্রায়ই এসব শিবিরে আগুন লাগে। আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, ফলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।

গত এক মাসেই রোহিঙ্গা শিবিরে এটি দ্বিতীয় অগ্নিকাণ্ড। এর আগে, এক ঘটনায় এক শিশু মারা যায় এবং ৬০টির বেশি ঘর পুড়ে যায়। গত ডিসেম্বরের আরেক অগ্নিকাণ্ডে দুইজন নিহত ও ১৯ জন আহত হন এবং ৮০০-র বেশি ঘর ধ্বংস হয়ে যায়। এসব ঘটনা শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।

কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির অবস্থিত, যেখানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কিন্তু এসব শিবিরে অগ্নিকাণ্ড, দুর্যোগ ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM) নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে। তবে শুধুমাত্র প্রশিক্ষণই যথেষ্ট নয়। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ ও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। না হলে রোহিঙ্গাদের জীবন প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়বে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ড রোধে স্থায়ী ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে শিবিরগুলোর নির্মাণ কাঠামো উন্নত করা, দাহ্য বস্তু ব্যবহারে সতর্কতা এবং অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম বাড়ানো। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা নিশ্চিত করতে হবে।

রোহিঙ্গা শিবিরে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড যেন আর না ঘটে, সে জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে না, যা শরণার্থীদের জীবনে স্থায়ী দুর্ভোগ বয়ে আনবে।

আমাদের ফলো করুন