বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী র্যাবের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাহিনীটি বিলুপ্তির সুপারিশ করার পর সরকার নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, র্যাবের জায়গায় আসতে পারে নতুন একটি বাহিনী, যার সম্ভাব্য নাম হতে পারে ‘র্যাট’। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত এবং এই বাহিনীকে বিলুপ্ত করা উচিত। এর পরই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, র্যাবের পরিবর্তে নতুন একটি বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠনের পরিকল্পনা চলছে। নতুন বাহিনীর নাম, কাঠামো ও দায়িত্ব নির্ধারণে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, র্যাব বিলুপ্ত হলে নতুন বাহিনী শুধু পুলিশের সদস্যদের দিয়েই গঠিত হবে। বাহিনীর পোশাক, লোগো ও কাঠামোতে আসবে পরিবর্তন। এছাড়া জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আলাদা তদন্ত ইউনিট থাকবে, যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এলে তা নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখা যায়।
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত র্যাব শুরুতে জঙ্গিবাদ, চরমপন্থি, জলদস্যু ও বনদস্যু দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাহিনীটি স্বাধীনতা পদকও লাভ করে। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই র্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠতে থাকে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মতো ঘটনায় বাহিনীটি সমালোচনার মুখে পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাহিনীটি আন্তর্জাতিকভাবে আরও চাপে পড়ে। সাবেক সরকার আমেরিকার লবিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হয়নি।
সরকারের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় উঠে এসেছে, র্যাবের গঠনতন্ত্রে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকায় অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের অভাব ছিল। এই দুর্বলতা দূর করতেই নতুন বাহিনীতে শুধু পুলিশের সদস্য রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, ‘র্যাব বিলুপ্তি না সংস্কার করা হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।’
র্যাব বিলুপ্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে নতুন বিশেষায়িত বাহিনী গঠনের কাজ এগিয়ে চলছে। সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আসতে পারে।
র্যাব থাকবে, নাকি নতুন বাহিনী আসবে—এমন প্রশ্নের উত্তর এখনো স্পষ্ট নয়। তবে জাতিসংঘের সুপারিশ এবং আন্তর্জাতিক চাপে সরকার যে বিকল্প ভাবছে, তা নিশ্চিত।