বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় নতুন মোড়। দুই দেশ সীমান্তে নতুন করে প্রায় ১০০টি স্থানে বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে চলমান সীমান্ত বেড়া নির্মাণের কাজও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন জানিয়েছে, সম্প্রতি দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী— ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এবং বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)— এর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
সূত্রের তথ্যমতে, নতুন ১০০টি স্থানে প্রায় ৭০-৭২ কিলোমিটার এলাকায় সীমান্ত বেড়া নির্মাণ করা হবে। এর আগে ৯২টি স্থানে ৯৫.৮ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া নির্মাণ কাজ চলছিল।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে এই সীমান্ত বেড়া নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। ঢাকার মতে, এটি ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত কর্তৃপক্ষের যৌথ নির্দেশনা লঙ্ঘন করে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো প্রতিরক্ষা কাঠামো নির্মাণ করা যাবে না।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, সীমান্ত বেড়া কোনো প্রতিরক্ষা কাঠামো নয়। এটি মূলত অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সীমান্ত অপরাধ দমন করার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনার নামে ভারত একতরফাভাবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে।
সম্প্রতি মালদা সীমান্তে বেড়া নির্মাণের সময় বিজিবি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এতে সীমান্তে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এর পরপরই সীমান্ত নিয়ে আলোচনায় বসে দুই দেশের বাহিনী।
এদিকে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে নতুন একাধিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষ করে বিজিবি ও বিএসএফের ডেপুটি কমান্ডারদের মধ্যে নতুন হটলাইন চালু করা হবে।
নতুন হটলাইন ভারতের বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও ঢাকায় বিজিবির সদর দপ্তরে নিযুক্ত তার সমকক্ষ কর্মকর্তার মধ্যে স্থাপন করা হবে। বর্তমানে বিজিবি-বিএসএফ প্রধানদের মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থা থাকলেও এবার আরও নীচের স্তরে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে।
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের নতুন সরকার গঠনের পর এটি ছিল দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তে নতুন বেড়া নির্মাণ ও দুই বাহিনীর সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত পারস্পরিক সমঝোতার ইঙ্গিত দেয়। তবে বাংলাদেশ এই প্রকল্প কতটা মেনে নেবে, তা সময়ই বলে দেবে।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন