ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে আসছে স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠন ‘বিপ্লবী ছাত্রশক্তি’। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা এই সংগঠনের মূল কারিগর। আগামী দু’একদিনের মধ্যেই মধুর ক্যান্টিন থেকে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে।
নতুন সংগঠনের মূল প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে— ‘স্টুডেন্ট ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট’। সংগঠনটির লক্ষ্য হবে ছাত্ররাজনীতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করা।
সংগঠনটির নাম ‘বিপ্লবী ছাত্রশক্তি’ রাখা হতে পারে, তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় ২৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। ইতিমধ্যে সংগঠনের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত হয়েছে, যেখানে রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা, শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ও সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সংগঠনের নেতৃত্বে থাকবে চারটি মূল পদ— আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠক।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য হওয়ার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর সংগঠনের সদস্যপদ ধরে রাখতে পারবেন।
সংগঠনের ব্যয় নির্বাহে সদস্যদের চাঁদার ভিত্তিতে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নতুন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন আবু বাকের মজুমদার, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হতে পারেন আবদুল কাদের।
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে জাহিদ আহসান ও তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী আলোচনায় আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব হতে পারেন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মহির আলম।
কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য সংগঠক পদে জাহিদ আহসান, তাহমিদ আল মুদ্দাসসির ও আল আমিন সরকার আলোচনায় রয়েছেন। আর ঢাবি শাখার মুখ্য সংগঠক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হাসিব আল ইসলাম।
সংগঠনটি নারীদের জন্য রাজনৈতিক পরিসরে ‘কমফোর্ট পলিটিক্স’-এর ব্যবস্থা রাখবে, যাতে তারা নিরাপদ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজনীতিতে অংশ নিতে পারেন।
মুখপাত্র পদে নারী নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন আশরেফা খাতুন ও রাফিয়া রেহনুমা হৃদি। আর ঢাবি শাখার মুখপাত্র পদে থাকতে পারেন রাফিয়া রেহনুমা হৃদি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, আমরা মেধাভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছি। নতুন সংগঠনটি আদর্শিক রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকেও ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রেজওয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, সংগঠনের ঘোষণাপত্র প্রায় চূড়ান্ত। নতুন নেতৃত্বে নারীদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সংগঠনের লক্ষ্য ও আদর্শ স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নেতৃত্বে আবু বাকের মজুমদার ও আবদুল কাদের প্রায় নিশ্চিত। তবে নাম চূড়ান্ত হওয়ার পরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। সংগঠনটি আদর্শিক অবস্থান কীভাবে নির্ধারণ করবে এবং ছাত্রদের মধ্যে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।
আগামী দু’একদিনের মধ্যেই ঘোষণা হতে পারে সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এখন অপেক্ষা আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের।