নিউজনেস্ট

ভারতের দূষিত পানি ঢুকে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ও কৃষি

ভারতের দূষিত পানি ঢুকে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ও কৃষি
ভারতের দূষিত পানি ঢুকে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ও কৃষি। ছবি : সংগৃহীত

ভারত থেকে আসা বিষাক্ত পানি বাংলাদেশে ঢুকে জনস্বাস্থ্য ও কৃষিকে ভয়ংকর হুমকির মুখে ফেলেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে আসা এ দূষিত পানিতে রয়েছে নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কৃষিজমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, নদী ও খালে মাছের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহরে কোনো আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে হাসপাতাল, শিল্প-কারখানা ও বাসাবাড়ির বর্জ্য সরাসরি আখাউড়ার জাজিনদী, কালন্দি খাল ও মরানদী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এসব পানিতে সিসা, সালফার, দস্তা, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এই দূষিত পানি মিশছে তিতাস নদীতে। ফলে আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী দুই ইউনিয়ন ও পৌরসভার ২০-২৫টি গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, একসময় মিঠা পানির উৎস ছিল এই খাল ও নদীগুলো। এখন সেগুলো বিষাক্ত পানিতে ভরপুর। খালের পানি এতটাই দূষিত হয়েছে এলাকাবাসী একে ‘কালো পানির খাল’ বলে ডাকছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালন্দি খাল ও বাউতলার মরানদী দিয়ে বর্জ্য ভেসে আসছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দারা প্রায়ই শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ও নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দুর্গন্ধের কারণে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করাও কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় জেলে ও কৃষকেরা জানাচ্ছেন, দূষিত পানির কারণে মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গৃহপালিত পশুপাখি এই পানি পান করলে অসুস্থ হয়ে পড়ে, অনেক সময় মারা যায়।

বাংলাদেশ সরকারের যৌথ নদী কমিশন এ দূষিত পানি নিয়ে একাধিকবার পরীক্ষা চালালেও এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভারতও এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাস্তবায়ন করেনি।

২০১৬ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এক মন্ত্রী ইফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

আখাউড়ার কৃষি কর্মকর্তা মোছাম্মদ তানিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘পানিতে বিপজ্জনক রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্রয়োজনের তাগিদে কৃষকেরা এই পানি ব্যবহার করলেও আমরা তা বর্জনের পরামর্শ দিচ্ছি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হিমেল খান জানান, এ দূষিত পানি হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, এলার্জি ও পানিবাহিত নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

এলাকাবাসী বলছেন, তারা যুগের পর যুগ এই সমস্যার কথা জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। ভারতের দূষিত পানি পরিশোধন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে।

সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নইলে বাংলাদেশের পরিবেশ ও জনজীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

নিউজনেস্ট ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত