মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় আরাকান রাজ্যের বুথিডং শহরে রোহিঙ্গাদের ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ি দখলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। তবে দীর্ঘদিন বাস্তুচ্যুত থাকার পর শহরের কিছু অংশে রোহিঙ্গাদের ফিরতে দেওয়া হয়েছে।
সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি জানিয়েছে, যারা সংঘাতের কারণে ইয়াঙ্গুন, বাংলাদেশ বা মালেশিয়ায় পালিয়ে গেছে, তাদের ঘরবাড়ি তারা দখলে নেবে। এর আগে গোষ্ঠিটি দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের নিজ ঘরে ফিরতে বাধা দিয়েছিল।
এদিকে বুথিডংয়ের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সাত মাস পর প্রথমবারের মতো কিছু রোহিঙ্গাকে ঘরে ফিরতে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও কিছু পরিবার ফিরতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ পরিবার নিজ ঘরে ফিরেছে বলে জানা গেছে।
বুথিডং শহরের আটটি ওয়ার্ডেই একসময় বহু রোহিঙ্গা বাস করতেন। কিন্তু গত বছরের মে মাসে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি শহরের বেশির ভাগ এলাকা পুড়িয়ে দেয়। এতে ৯৫ শতাংশ রোহিঙ্গা বসতঘর ধ্বংস হয়ে যায়। আগুনে পুড়ে প্রাণ হারান অনেকে, আহত হন হাজারো মানুষ। জীবন বাঁচাতে বহু রোহিঙ্গা পালিয়ে যান ইয়াঙ্গুন, বাংলাদেশ ও মালেশিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায়।
৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডই একমাত্র এলাকা, যা পুরোপুরি আগুনে পুড়েনি। তবে রোহিঙ্গারা যখন আগেও নিজেদের ঘরে ফিরতে চেয়েছিলেন, তখন সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি তাদের বাধা দিয়েছিল। এখনো শহরের অধিকাংশ অংশে তারা ফিরতে পারছেন না।
এ বছরের জানুয়ারিতে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি বুথিডংয়ের পালেটডং গ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে। একই সাথে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে ঘরবাড়ি ছেড়ে ধানক্ষেতে অস্থায়ী আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়। অনেক রোহিঙ্গা বাধ্য হয়ে মংডুতে পালিয়ে যান।
সংঘাতে অনিশ্চিত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে রাজ্যের বড় অংশ তাদের দখলে চলে গেছে। কিন্তু এই সংঘাতের সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছে রোহিঙ্গারা।
একদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার শিকার হয়েছেন তারা। অন্যদিকে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অসহায় রোহিঙ্গাদের উপর দমন-নিপীড়ন, গণহত্যা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে।
২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আজও তারা নিরাপদ নন। নতুন করে সহিংসতার কবলে পড়ে হাজারো রোহিঙ্গা আবারও বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন।
আঁধারে আচ্ছন্ন রোহিঙ্গাদের আগামি দিন
যুদ্ধ যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ বাড়ছে। ঘরহারা মানুষগুলো এখনো নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। যাদের থাকার জায়গা আছে, তাদের চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি।
একসময় যেখানে বসতি ছিল, এখন সেখানে পড়ে আছে শুধুই ধ্বংসস্তুপ। কিন্তু এই ধ্বংসস্তুপেও প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকা আর অস্তিত্বের লড়াই করে যাচ্ছেন নিরীহ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি।
সূত্র: এএনএ







