চীনের শিনজিয়াং অঞ্চলের বিশিষ্ট উইঘুর ইতিহাসবিদ ঘোজানিয়াজ ইয়োল্লুঘ তেকিনকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার অপরাধ হলো, উইঘুরদের তুর্কি বিশ্বের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা এবং এই বিষয়ে গবেষণা ও লেখালেখি করা।
৫৯ বছর বয়সী তেকিন আকসু শহরের আকসু এডুকেশন ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। তিনি উইঘুর টোপোনিমি (স্থানীয় ভূগোল ও নামের ইতিহাস) নিয়ে গবেষণা করতেন। ২০১৭ সালে চীনা কর্তৃপক্ষ উইঘুরদের ব্যাপক ধরপাকড়ের সময় তাকে আটক করে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তেকিন বর্তমানে হোতানে (আকসু শহর থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে) সাজা ভোগ করছেন।
তেকিন ২০১৮ সালে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি গবেষণা ও লেখার মাধ্যমে উইঘুরদের চীনের অংশ নয়, বরং তুর্কি বিশ্বের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
নরওয়েভিত্তিক গবেষক আবদুওয়েলি আয়ুপের তথ্যমতে, তেকিন ছিলেন প্রায় ১৮ লাখ উইঘুর বন্দির মধ্যে একজন। যাদের মধ্যে শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ীও রয়েছেন।
তেকিনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, বর্তমানে কানাডায় বসবাসরত অধিকারকর্মী তুইঘুন আবদুওয়েলি জানান, উইঘুর ইতিহাস নিয়ে তাঁর গবেষণার কারণে চীনা কর্তৃপক্ষ প্রায়ই তাকে হয়রানি করত। এমনকি তিনি যে ইতিহাসবিদদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন, তাদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
তেকিনকে তার সহকর্মীরা ‘আকসুর তুরঘুন আলমাস’ বলে ডাকতেন। তুরঘুন আলমাস ছিলেন ২০শ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী উইঘুর ইতিহাসবিদ, যিনি চীনের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে গবেষণা করেছিলেন।
১৯৮০-এর দশকে তেকিন ‘পূর্ব তুরকিস্তান, পশ্চিম তুরকিস্তান ও তুরানের ধারণা’ নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন, যা উইঘুরদের মধ্যে আলোড়ন তোলে এবং চীনা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এরপর তাকে শিক্ষকতার পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং বারবার জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হয়।
২০১৮ সালে চীনা কর্তৃপক্ষ তাকে ‘জেদি বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করে পুনঃশিক্ষা শিবিরে পাঠায়। চীন দাবি করেছিল, এসব শিবির ছিল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কিন্তু সাবেক বন্দিদের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব শিবিরে রাজনৈতিক প্রভাবিতকরণ, নির্যাতন, নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন ও জোরপূর্বক বন্ধ্যাত্বকরণের মতো ঘটনা ঘটেছে।
চীন সরকার বলেছে, এসব শিবির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, উইঘুরদের ওপর নিপীড়ন এখনো চলছে।
সূত্র: আরএফএ