ইন্দোনেশিয়ায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা চরম সংকটের মুখে পড়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) তাদের সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে, ফলে অনেক পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে।
মেদান শহরে আইওএমের ব্যবস্থাপনায় থাকা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে অনেক রোহিঙ্গাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাসিক আর্থিক সহায়তা কমানো হয়েছে, যার ফলে তাদের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় এখন অনেক রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। তারা যে সামান্য সহায়তা পাচ্ছে, তা দিয়ে বাসা ভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
শরণার্থী হুসাইন জানান, ফেব্রুয়ারিতে তাকে, তার স্ত্রী ও চার সন্তানকে আইওএমের আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়। এখন বাসা ভাড়া ও জীবিকা নির্বাহের পুরো দায়িত্ব তাদের নিজেদেরই নিতে হচ্ছে। হতাশার সুরে তিনি বলেন, ‘চার বছর ধরে যে আশ্রয় পাচ্ছিলাম, হঠাৎ তা বন্ধ হয়ে গেল কেন?’
আগে প্রতিজন প্রাপ্তবয়স্ক রোহিঙ্গা মাসে ১,২৫০,০০০ ইন্দোনেশীয় রুপি (প্রায় ৭৬ ডলার) সহায়তা পেতেন, আর ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫০০,০০০ রুপি (৩০ ডলার)। সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের ২০০,০০০ রুপি (১২ ডলার) দেওয়া হতো। এছাড়া ছিল বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও দুই কক্ষবিশিষ্ট বাসস্থান। কিন্তু এখন এই সুবিধাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
আইওএম জানিয়েছে, সহায়তা কমানোর মূল কারণ বাজেট সংকট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাময়িকভাবে বিদেশি সহায়তা বন্ধ রেখেছেন, যার প্রভাব পড়েছে শরণার্থী সহায়তা কার্যক্রমেও।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক দাফরি আগুসালিম এ সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, সহায়তা বন্ধ হলে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। ইতোমধ্যে কিছু শরণার্থী মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, যেখানে মানবপাচারকারীরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
তিনি ইন্দোনেশিয়া সরকারকে আসিয়ান (দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংগঠন) থেকে সহায়তা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং আইওএমকে অন্যান্য দাতা দেশ থেকে তহবিল সংগ্রহের আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়ায় স্থানীয় জনগণের মধ্যেও রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় শরণার্থীদের নৌকাকে উপকূলে ভিড়তে দেওয়া হয় না।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৭০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বহনকারী একটি নৌকা আচেহ উপকূলে পৌঁছায়। এছাড়া মালয়েশিয়ায় প্রবেশে বাধা পেয়ে আরও ২৬৪ জন রোহিঙ্গা ইন্দোনেশিয়ায় আসতে বাধ্য হয়।
তবে ইন্দোনেশিয়া শরণার্থীদের পুনর্বাসনে আগ্রহী নয়। দেশটি জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেনি এবং তারা মনে করে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া তাদের দায়িত্ব নয়। বরং প্রতিবেশী দেশগুলোকে এই বোঝা ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের দমন-পীড়ন থেকে পালিয়ে আসছে। ২০১৭ সালের গণহত্যার পর হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তবে সেখানকার শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতিও ভয়াবহ, যার ফলে অনেকেই নিরাপদ জীবনের আশায় বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় পা বাড়াচ্ছে।
কিন্তু এই যাত্রা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক নৌকা ডুবে যায়, কেউ কেউ হারিয়ে যায় সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে। আর যারা বেঁচে থাকেন, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
সূত্র: আরাকান নিউজ এজেন্সি







