মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য আরাকানে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির নির্যাতনের শিকার হয়ে আরো ৩১০ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। মঙ্গলবার স্থানীয় সূত্রের বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে আরাকান নিউজ এজেন্সি।
রোহিঙ্গা মানবাধিকারকর্মী সাইফ আল আরাকানি জানান, গত শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি বুথিডং শহর থেকে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রওনা হন। সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি গত ৯ মাস ধরে তাদের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশের টেকনাফ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। তিনি আরও জানান, আরও প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা রাতের আঁধারে আরাকান ছেড়ে বাংলাদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
সাইফ আল-আরাকানি বলেন, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করছে এবং সীমান্তে পৌঁছাতে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে। ফেব্রুয়ারির শেষ দুই সপ্তাহে বুথিডং থেকে প্রায় ১,০২০ রোহিঙ্গা একই কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।
তিনি জানান, বর্তমানে বুথিডং শহরের ১৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আরাকান সীমান্তে অপেক্ষা করছে, যাতে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। এর আগে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকার জন্য সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গা আরাকান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
এদিকে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির দখলে থাকা বুথিডংয়ে রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা চলাচলের স্বাধীনতা হারিয়েছে, নিয়মিত অপহরণ ও হত্যার শিকার হচ্ছে। যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তাদের সম্পত্তি দখল করে নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে যারা এখনো সেখানে অবস্থান করছে, তাদের জোরপূর্বক গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের মে মাসে বুথিডং শহরের কেন্দ্রস্থলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যাতে শহরের ৯৫ শতাংশ রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে যায়। এতে শত শত রোহিঙ্গা নিহত হন এবং হাজারো মানুষ আহত হয়। ফলে অনেকে পাশের গ্রামগুলোতে অথবা দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে এবং ইতিমধ্যে রাজ্যের বিস্তৃত অঞ্চল তাদের দখলে চলে গেছে। তবে এই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোহিঙ্গারা। তারা উভয় পক্ষের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে—একদিকে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি তাদের জোরপূর্বক সেনায় ভর্তির জন্য বাধ্য করছে, অন্যদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই তাদের দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছে।
২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা অভিযানে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। এখন আবার নতুন করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে নিজ জন্মভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সূত্র : এএনএ







