আরাকান আর্মির দখলে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ: চলছে জোরপূর্বক শ্রম, চাঁদাবাজি ও নিপীড়ন

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন আরও তীব্র করেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সংগঠনটি রোহিঙ্গাদের বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দিতে বাধ্য করছে এবং ব্যাপকহারে চাঁদা আদায় করছে।

সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন মংডু শহরের রোহিঙ্গাদের রাস্তা নির্মাণ ও মেরামতের কাজে বাধ্য করা হচ্ছে, কিন্তু কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া প্রতিটি পরিবারকে রাতের পাহারায় অন্তত একজন সদস্য দিতে হচ্ছে।

এদিকে রাস্তা নির্মাণের নামে স্থানীয়দের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার মিয়ানমার কিয়াত (প্রায় ২ থেকে ৩ মার্কিন ডলার) থেকে শুরু করে ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ কিয়াত (প্রায় ১১ থেকে ২২২ মার্কিন ডলার) পর্যন্ত অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে মংডু শহরে চাঁদাবাজির মাত্রা আরও বেড়েছে। বিশেষ করে স্বর্ণের দোকানের মালিকদের ৪ থেকে ৫ লাখ কিয়াত (প্রায় ৮৮ থেকে ১১১ মার্কিন ডলার) পর্যন্ত কর দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে মংডুর বাইরে ছোট দোকানে ব্যবসা করছেন।

পাশাপাশি ফার্মেসি, মুদি দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসার ওপরও কর আরোপ করা হয়েছে, যার পরিমাণ ন্যূনতম ১ লাখ কিয়াত (প্রায় ২২ মার্কিন ডলার)। বাজারগুলোতে কর সংগ্রহের জন্য ‘বাজার প্রধান’ বা ‘কর সংগ্রাহক’ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর আদায় করেন।

সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি বর্তমানে পুরো রাজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের প্রধান তিন শহর—মংডু, বুথিডং ও রাথিডং সম্পূর্ণ তাদের দখলে। এসব এলাকায় প্রতিনিয়ত অসহায় রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া ও পুনর্বাসন থেকে বঞ্চিত করার মতো ঘটনা ঘটছে।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি কর্তৃক মংডুর পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের দোকানপাট, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির ওপর কর বসিয়েছে আরাকান আর্মি। এমনকি তাদের ফসল ও যানবাহন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং ফেরত পেতে অর্থ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা নজরদারির নামে প্রতিটি পরিবারকে ছবি সংযুক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক তাদের বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা ও গোয়েন্দা কাজে সহযোগিতা করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের নভেম্বরে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে। এতে তারা রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে। তবে এই লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোহিঙ্গারা। দুই পক্ষের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে তারা সহিংসতা, বাস্তুচ্যুতি, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক সেনায় অন্তর্ভুক্তির শিকার হচ্ছেন।

আমাদের ফলো করুন