মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের উপর দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে বরাবরের মতই। সাম্প্রতিক অভিযানে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের বুথিাডং শহরের উত্তরের কয়েকটি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামে জোরপূর্বক উচ্ছেদ অভিযান চালায়। দখল নেয় রোহিঙ্গাদের মালিকানাধীন জমিজমা।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, জোরপূর্বক উচ্ছেদ অভিযানে যেসব গ্রাম অন্তর্ভুক্ত ছিল, তার মধ্যে রয়েছে ‘মাউং জি টাউং’ (শব বাজার), ‘অং লাং বিন’ (মউরিসা বিল), ‘ওলি পাবারা’, ‘থারিয়ে কুন টান’ (শোকরি কোনা), ‘মাউং হ্লা মা’ (ইয়াং ফারা), ‘নগ কিয়েন টক’, ‘বাদানা’, ‘কো মি খালি’, ‘মি কিয়াং’, ‘কুন টান’ এবং ‘লাউং চাউং’ (রোসারনা বিল) ও ‘ওরিয়া ফারা’।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, আরাকান সেনা এই গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে এবং তাদের জমি দখল করে নেয়। তাদের পরিকল্পনা রয়েছে উচ্ছেদ হওয়া লোকজনকে মায়ু নদীর পূর্ব তীরে স্থানান্তর করার।
‘মাউং জি টাউং’ গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, ‘আমাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে আমরা আর কখনোই আমাদের গ্রামে ফিরতে পারব না। এমনকি আমাদের মালিকানাধীন কৃষিজমিগুলো পরিদর্শনেরও অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারা বলেছে, আমরা শুধু বর্তমানে যেখানে আশ্রয় নিয়েছি, সেখানেই থাকতে পারব। সম্ভবত মায়ু নদীর পূর্ব তীরে আমাদের জন্য একটি ছোট জমির টুকরো বরাদ্দ করা হতে পারে, যেখানে ২০×৬০ ফুটের একটি ঘর বানানোর অনুমতি দেওয়া হবে। আমি আমার পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া সব সম্পত্তি এবং জমিজমা হারিয়ে ফেলেছি।’
‘মি কিয়াং’ গ্রামের রোহিঙ্গা কৃষকরা জানিয়েছেন, আরাকান সেনা তাদের কৃষিজমি ও সম্পত্তি দখল করেছে। একই সময়ে, এসব জমি ‘কুনি টান’ (ডাইন নিট) গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হচ্ছে। কিছু জমি আরাকানী জাতিগোষ্ঠীর কৃষকদের দেওয়া হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে দখলকৃত জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছে এবং সেখানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মি ‘মি কিয়াং’ গ্রাম থেকে কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে এবং বুথিডাং শহরে মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা কেবল বাংলাদেশি সিমের মাধ্যমে বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন, তবে এসব সিম ব্যবহারেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কেউ বাংলাদেশি সিমসহ ধরা পড়লে তার সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
তিনি জানান, আরাকানের সীমান্তবর্তী বুথিডাং শহরের ১৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের পর আরাকান আরাকান আর্মি তাদের নাফ নদী পার হওয়ার অনুমতি দিয়েছে। তিনি আরও জানান, চলতি বছরের শুরু থেকে প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গা আরাকান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।
সূত্র : এনএ