কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টির হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় শরণার্থীদের মধ্যে খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছেছে, যা শিশুদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, শরণার্থী শিবিরের অন্তত ১৫ শতাংশ শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে, যা ২০১৭ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। এই অবস্থায় থাকা শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি সুস্থ শিশুদের তুলনায় ১১ গুণ বেশি।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘বর্তমানে মায়েদের ও গুরুতর অসুস্থ শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু সহায়তা অব্যাহতভাবে কমতে থাকায় অনেক পরিবার তাদের শিশুদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত।’
তিনি জানান, খাদ্য সহায়তা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, জরুরি তহবিল না পেলে শরণার্থীদের মাসিক খাদ্য সহায়তা ১২.৫ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনা হতে পারে, যা ন্যূনতম চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তীব্র অপুষ্টির কারণে চিকিৎসার প্রয়োজন হওয়া রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা ২০২৪ সালের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৮৩৬, যা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে হয়েছে ১,০২৬।
সংস্থাটি জানায়, এই সংকটের পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে অতিবৃষ্টি ও বন্যার ফলে শিবিরের স্বাস্থ্য ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, ডায়রিয়া, কলেরা ও ডেঙ্গুর মতো রোগের বিস্তার অন্যতম। এছাড়া, গত দুই বছরে খাদ্য সহায়তা ধাপে ধাপে কমে যাওয়া, খাদ্যের গুণগত মানের অবনতি এবং নতুন করে আরও শরণার্থীর আসায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
ইউনিসেফ জানায়, ২০২৪ সালে তারা পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ১২ হাজার শিশুকে অপুষ্টির চিকিৎসা দিয়েছে। এসব শিশুর ৯২ শতাংশ সুস্থ হলেও জরুরি ও দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এখনো মিয়ানমারে নিরাপদে ফিরতে পারছে না এবং বাংলাদেশে তাদের কাজ করার সুযোগ নেই। ফলে মানবিক সহায়তা তাদের জন্য জরুরি।’
তিনি আরও জানান, ইউনিসেফ শরণার্থীদের জন্য সহায়তা চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে নিশ্চিত অর্থায়ন ছাড়া মৌলিক সেবা প্রদান কঠিন হয়ে পড়বে।
ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালে রোহিঙ্গা শিবিরে ১৪,২০০ শিশুর তীব্র অপুষ্টিতে ভোগার আশঙ্কা রয়েছে। খাদ্য সহায়তা কমে যাওয়া, অপুষ্টির হার বৃদ্ধি, বিশুদ্ধ পানির অভাব ও স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতির কারণে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, ২০২৫ সালের এপ্রিলে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা আরও কমতে পারে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শরণার্থীরা। অনেকেই বলেছেন, সহায়তা কমে গেলে তাদের ও তাদের শিশুর না খেয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি হবে।
কক্সবাজারে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে তারা পালিয়ে আসে। এখন তারা ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরে কঠিন মানবেতর জীবনযাপন করছে। জাতিসংঘ এই শরণার্থী শিবিরকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সূত্র: এএন