নিউজনেস্ট

গাজায় গণহত্যা ও ভারতে মুসলিম নিধনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

গাজায় গণহত্যা ও ভারতে মুসলিম নিধনের প্রতিবাদে উলামা-জনতা ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন
গাজায় গণহত্যা ও ভারতে মুসলিম নিধনের প্রতিবাদে উলামা-জনতা ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন। ছবি: নিউজনেস্ট

আজ ২০শে মার্চ (বৃহস্পতিবার) পশ্চিমা বিশ্বের প্রত্যক্ষ মদদে গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত গণহত্যা ও রাষ্ট্রীয় মদদে ভারতে মুসলমানদের উপর চলমান জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদে উলামা জনতা ঐক্য পরিষদের আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

জনাব শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আবু তাসমিয়া আহমেদ রফিক, আসিফ আদনান, ডা. মেহেদী হাসান, ডা. আসিফ সৈকত, গণ অধিকার পরিষদের তারেক রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, নাজমুল হক ও অন্যান্যরা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত ১৯শে জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির চুক্তির মাধ্যমে গাযাবাসীরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি বর্বরতার পর কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল। তবে ইসরায়েল বারবার চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে হামলা চালিয়ে এসেছে। সর্বশেষ ১৮ মার্চ ভয়ংকর বিমান হামলার মাধ্যমে তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অকার্যকর ঘোষণা করে, যেখানে প্রায় একশ’ শিশুসহ চার শতাধিক ফিলিস্তিনি শহিদ হন। উপস্থিত বক্তাগণ এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানান এবং ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

বক্তারা বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘Except Israel’ নীতি পুনর্বহালের দাবি জানান। তারা বলেন, ইসরায়েলের সাথে কোন সম্পর্ক না রাখার নীতিগত অবস্থান বাংলাদেশের জন্য সম্মানজনক এবং মুক্তিকামী জাতির জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে, যদি এই নীতি অবিলম্বে পুনর্বহাল না করা হয়, জনগণ আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

পাশাপাশি বক্তারা বলেন, ‘হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনামলে বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলের থেকে ‘Pegasus’ স্পাইওয়্যারসহ নজরদারি সরঞ্জাম এনে জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। তারা প্রশ্ন তোলেন, এই স্পাইওয়্যার কেনার পাশাপাশি আর কী কী চুক্তি হয়েছে? বক্তারা সরকারকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, বিগত সরকার ইসরায়েলের থেকে কী কী সুবিধা নিয়েছে এবং কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা জনগণের সামনে প্রকাশ করা হোক। যারা ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়, তারা একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে এবং জনগণ কখনো এই বিশ্বাসঘাতকতাকে ক্ষমা করবে না।‘

বক্তারা আরও বলেন, গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞের মতোই ভারতে মুসলমানদের ওপর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত দমন-পীড়ন উদ্বেগজনক। হিন্দুত্ববাদ ও জায়োনিজম প্রকৃত মিত্র—দুই মতবাদই সাম্রাজ্যবাদী, দখলদার ও মুসলিমবিরোধী আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে।

তারা মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের বাংলাদেশ নিয়ে সাম্প্রতিক মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান এবং একে ভারতীয় মিডিয়ার ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডার প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেন। বক্তারা বলেন, তুলসী গ্যাবার্ড যখন ভারতে সফর করেন, তখন মুসলমানদের লিঞ্চ করা হয়, নারীদের ধর্ষণ করা হয়, মসজিদ ধ্বংস করা হয়—কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে তিনি নীরব থাকেন। অথচ বাংলাদেশ ও ইসলামের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলে তিনি দ্বিচারিতার পরিচয় দেন। বক্তারা বলেন, এটি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের চিরাচরিত নীতি, যেখানে মুসলমানদের প্রতি নির্যাতন উপেক্ষা করা হয়, অথচ মিথ্যা অভিযোগ তুলে মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়।

বক্তারা বলেন, এই বর্বরোচিত গণহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি, ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এবং ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের মাধ্যমে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিরোধের অংশ হতে হবে। তারা আহ্বান জানান রমজানের শেষ দশকে বিশেষ দোয়া, কুরআন তিলাওয়াত এবং ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে আকুতি জানানোর।

অবিচার ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেয় উলামা-জনতা ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

নাহিন শিকদার
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত