রমজানে রোজা ঠেকাতে উইঘুরদের বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করছে চীন

রমজানে রোজা ঠেকাতে উইঘুরদের বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করছে চীন
রমজানে রোজা ঠেকাতে উইঘুরদের বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করছে চীন। ছবি: আরএফএ

চীনের শিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর মুসলিমদের রমজান মাসে রোজা রাখা ও নামাজ আদায়ে বাধা দিতে কর্তৃপক্ষ তাদের জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত করছে। স্থানীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, উইঘুরদের রমজানের সময় বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত করা হয়েছে। কেউ কাজ করছে কৃষিক্ষেতে, কেউ বা জোরপূর্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত। এই উদ্যোগ উইঘুরদের ধর্মীয় চর্চার ওপর নিষেধাজ্ঞার অংশ। শিনজিয়াংয়ের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ উইঘুর মুসলিম দীর্ঘদিন ধরেই চীনা সরকারের নিপীড়নের শিকার।

রমজানে মুসলিমগণ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখেন। কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ ‘ধর্মীয় চরমপন্থা দমন’-এর অজুহাতে রোজা রাখা নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি লোকজনকে দুপুরের খাবার খাওয়ার ভিডিও পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাদের রোজা না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।

শুক্রবার মসজিদে নামাজ পড়া এবং মুসলিমদের অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব উদযাপনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রমজানের দ্বিতীয় দিনে হোতান এলাকার উইঘুরদের কৃষিক্ষেতে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্য একটি ফুটেজে দাবি করা হয়েছে, সপ্তম দিনে সব উইঘুর পরিবারকে দলবদ্ধভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়।

আকসু অঞ্চলের অনসু কাউন্টির এক সরকারি কর্মচারী বলেন, ‘১৫ দিন ধরে স্থানীয়দের উঠান পরিষ্কার করতে ও গণশৌচাগার সংস্কার করতে বাধ্য করা হয়েছে।’

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অনেকে এই বাধ্যতামূলক শ্রমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি বলেন, ‘এটি তাদের জন্য ভালো, এতে তারা উপকৃত হবে।’ স্থানীয় এক কমিটি সদস্য জানান, রমজানের শুরু থেকেই উইঘুরদের বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ বাধা দিলে শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক পরিবার থেকে ১০ জনকে দুটি দলে ভাগ করা হয়েছে। তাদের বাধ্যতামূলক কাজ করতেই হবে।’ যারা এই আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদের সাত থেকে দশ দিন পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। কেউ বেশি আপত্তি করলে তাকে শিনজিয়াংয়ের কুখ্যাত ‘পুনঃশিক্ষা শিবিরে’ পাঠানো হয়।

আকসু অঞ্চলের একজন জানান, কর্তৃপক্ষ উইঘুরদের রমজানে রোজা রাখা ঠেকাতে দিনভর ‘রাজনৈতিক শিক্ষা’ সভার আয়োজন করেছে। স্থানীয় পুলিশ জানায়, এসব ক্লাস বিশেষভাবে সাহরি ও ইফতারের সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে নির্ধারণ করা হয়, যাতে কেউ রোজা রাখতে না পারে।

উচতুরপান কাউন্টির এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এই শ্রম কার্যক্রমের মাধ্যমে উইঘুরদের চিন্তাভাবনা পর্যবেক্ষণ করছি। কেউ যদি ক্লান্ত হয়ে পড়ে বা খাবার খেতে গড়িমসি করে তাহলে বুঝতে পারি, সে রোজা রেখেছে। এর অর্থ হলো তার চেতনায় সমস্যা রয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ‘প্রায় ১০ জন নিয়ম মানতে আপত্তি জানিয়েছিল, তাই আমরা তাদের ওপর বাড়তি আদর্শিক শিক্ষা প্রয়োগ করেছি।’

চীনের এসব পদক্ষেপ উইঘুরদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আরও কঠোর দমন-পীড়নের ইঙ্গিত দেয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এরই মধ্যে উইঘুরদের ওপর দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।

আমাদের ফলো করুন