মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য আরাকানের ছয়টি শহরে মারাত্মক পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এসব শহর হলো—বোনা গিউন, কিয়াউকটাউ, রাথিডং, পাওকটাউ, মিনবিয়া ও মংডু। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে এসব এলাকায় পানির অভাব দেখা দেয়। তবে এবার শরণার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
নদী-হ্রদের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বোনা গিউন শহরের পানির মজুত আগামী মাসের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে। অনেক এলাকায় ব্যবহারের উপযোগী পানি নেই। এক বাসিন্দা বলেন, ‘আগে কেবল স্থানীয় বাসিন্দারাই পানি ব্যবহার করতেন, তাতেও সংকট হতো। এখন শরণার্থীদের চাপ বাড়ায় গ্রীষ্মের শুরু থেকেই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে।’
নভেম্বর ২০২৪ থেকে বোনা গিউনের আশপাশের গ্রামগুলোতে পানির সংকট শুরু হয়। এসব গ্রাম হলো—বান নি লার, কিয়ান খিন, অং ফিউ বিন, থাইট চো, গানান টাউং ও মায়াত লাই। গরমের তীব্রতা ও পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
দূষিত জলাশয়ের পানি ব্যবহার
রাথিডং, কিয়াউকটাউ, মিনবিয়া ও পাওকটাউ শহরেও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বহু জলাশয় এখন কাদায় ভরে গেছে। ফলে স্থানীয়দের জন্য সেগুলো আর ব্যবহারযোগ্য নেই। কিয়াউকটাউ শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘পানি শেষ হয়ে গেছে। সব জলাশয় কাদায় ভর্তি, কোনো কোনোটি মারাত্মক দূষিত। বাধ্য হয়ে নতুন জলাশয় খনন করতে হচ্ছে।’
মংডুতে শোচনীয় পরিস্থিতি
মংডুর বেশ কয়েকটি গ্রামে ফেব্রুয়ারি থেকেই পানি সংকট চলছে। এসব গ্রাম হলো—থিট টন নার গওয়া সুন, মি তাইক, পাওং, মিংগালার নিয়ান্ত, অং মিংগালার, খা মাউং সিক, কিয়াউং না ফাই ও থার ইয়ার কুন। এসব এলাকার বাসিন্দাদের প্রায় এক ঘণ্টা হেঁটে পাহাড়ি উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়।
উল্লেখ্য, নভেম্বর ২০২৩ থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে আরাকানজুড়ে সহিংসতা বেড়েই চলছে। ইতিমধ্যে ৬ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা।
শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও চিকিৎসার চরম সংকট চলছে। নানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে আছে চর্মরোগ, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, আমাশয় ও ডেঙ্গু। চিকিৎসা ও ওষুধের অভাবের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, সংকট মোকাবেলায় পুরোনো কূপ ও জলাশয় খনন করা জরুরি। পাহাড়ি নদী থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আসন্ন খরার মৌসুম আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
সূত্র: এএনএ







