উগ্র হিন্দুত্ববাদী চক্রান্তের জেরে গত সোমবার ৭ই এপ্রিল বিহারের মোকামা রেলওয়ে স্টেশনে ৩২ জন মুসলিম শিশু ও তাদের এক অভিভাবককে প্রায় ১৪ ঘণ্টা ধরে আটক করে রাখা হয়। অভিযোগ, ধর্মীয় পরিচয়কে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
ওই শিশুরা গুজরাটের সুরাতের জামিয়া জাকারিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করতে যাচ্ছিল। ঈদের ছুটি শেষে মাদরাসায় ফেরার পথে তাদের নিশানা বানানো হয়। প্রত্যেকের সঙ্গে বৈধ ছাত্র পরিচয়পত্র ও ভর্তির নথি থাকা সত্ত্বেও রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (আরপিএফ) তাদের আটক করে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের উস্কানি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সন্দেহের বশবর্তী হয়েই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, শুধুমাত্র ধর্মীয় পোশাক—পায়জামা-কুর্তা ও টুপি পরার কারণে তাদের সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা কাইসার রেহান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘শিশুরা ঈদ উদযাপন শেষে সুরাত ফিরছিল। বৈধ কাগজপত্র ছিল তাদের সঙ্গে। তবু আরপিএফ তাদের কথা শোনেনি। তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, আটক শিশুরা আতঙ্কিত ও ভীত হয়ে বসে আছে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাদের ফোন করার বা খাবার গ্রহণের সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এমনি শিশুরা কাঁদছিল, ক্ষুধায় কষ্ট করছিল, তারা সম্পূর্ণ ভীত সন্ত্রস্ত ছিল।
স্থানীয়রা যখন শিশুদের মুক্তির দাবিতে এগিয়ে আসে, তখন তাদেরও গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আমিন বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল, সরে না গেলে পাটনা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমরা দাঁত কামড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বলেছিলাম, শিশুদের মুক্তি দিতে হবে। না দেওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে নড়বো না’
প্রবল জনমত এবং স্থানীয়দের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত রাতে শিশু ও তাদের অভিভাবককে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনার পর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মুসলিম পরিচয় এবং মাদরাসায় পড়াশোনার কারণেই পরিকল্পিতভাবে তাদের আটক করা হয়েছিল। এখন আরপিএফ-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং পরিপূর্ণ তদন্তের দাবি তুলেছেন।
সূত্র: এমএম







