সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি গত ৫ই এপ্রিল থেকে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের বুথিডং শহরে কারফিউ আরোপ করেছে। শহরের কেন্দ্রসহ কয়েকটি গ্রামকে এতে অন্তর্ভুক্ত করে এই কারফিউ জারি করা হয়।
আরাকান নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে জানানো হয়, গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে— হুন নিউ লেক, সাইওয়া গিয়া, কিন ডাউং, কিয়ানিউ বিন এবং এর আশপাশের এলাকা। এই কারফিউয়ের আওতায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের মাগরিব, ইশা এবং ফজর নামাজ পড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আরাকান আর্মি তাদের এই পদক্ষেপকে যুক্তিযুক্ত বলে দাবি করেছে। কারণ, ওই অঞ্চলে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (ARSA), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (RSO) এবং আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (ARA) গ্রুপগুলোর তৎপরতা রয়েছে।
কিন ডাউং গ্রামে বসবাসকারী একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আগে ১০টা রাতের পর বাইরে থাকার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু আমরা তখনও মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারতাম। কিন্তু এখন মাগরিব নামাজও পড়া যাচ্ছে না। এত ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি!’
আরাকান আর্মি স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়েছে যে, যদি এই গ্রামগুলোতে কোন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য প্রবেশ করে, তবে তাদের না জানালে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
এদিকে আরাকান আর্মি মংডু শহরের বাসিন্দাদেরও রোহিঙ্গা আর্মি বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা না করতে এবং তাদেরকে কোন সাহায্য না দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে বুথিডাং শহর দখলের পর, আরাকান আর্মি বেশ কিছু রোহিঙ্গা গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার অভিযোগ এনে তাদেরকে আটক করেছে। অনেক রোহিঙ্গাকেই অপহরণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ওহলা ফাই গ্রাম থেকে তিনজন রোহিঙ্গা রয়েছে যারা কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন।
গত মার্চ মাসে আরাকান আর্মি বুথিডাংয়ের ১২টি রোহিঙ্গা গ্রামে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি কার্যক্রম চালিয়েছে। যার মধ্যে রোহিঙ্গাদের জমি এবং চাষাবাদ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া তিনটি গ্রামকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যেখানে ৫০০টিরও বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়।
আরাকান আর্মি আরাকানের পরিবারগুলোকেও রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে পুনর্বাসিত করেছে। যাদের অনেকেই বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া অথবা ইয়াঙ্গুনে পালিয়ে গেছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা শিশু এবং বৃদ্ধদেরকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে আরাকান রাজ্য দখলের জন্য। এরপর ১৭টি শহরের মধ্যে ১৪টি শহর দখল করতে সফল হয়। এই সংঘর্ষের কারণে রোহিঙ্গা জনগণও সহিংসতা, বাস্তুচ্যুতি, নিপীড়ন এবং দুই পক্ষের পক্ষ থেকে জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে বাধ্য হচ্ছে। যা তাদের জীবনকে আরো দুর্বিষহ করে তুলেছে।
সূত্র: এএনএ







