মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডু শহরে এক রোহিঙ্গা যুবককে নির্মমভাবে শহিদ করেছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। একই সাথে তাঁর ভাইসহ আরও তিন রোহিঙ্গাকে তুলে নিয়ে গিয়ে চালানো হয়েছে পাশবিক নির্যাতন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে মংডুর উত্তরের ‘কিয়া কৌং তাং’ গ্রাম থেকে চারজন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির সদস্যরা। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলার প্রমাণ ছিল না।
এরপর ৬ এপ্রিল তাদের আনামুল হাসান (পিতা মোহাম্মদ শাবু) নামের একজনকে নিয়ে যাওয়া হয় ‘কান পেন’ নামের একটি রাখাইন সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রামে। পরে ১২ এপ্রিল ওই গ্রামেই আনামুলকে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির পাশাপাশি কিছু রাখাইন বৌদ্ধ গ্রামবাসীও জড়িত ছিল। এখনও নিহতের মরদেহ পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, আনামুলের ভাই আনোয়ার সাদিককে নিয়ে যাওয়া হয় ‘কিয়াইন চং’ গ্রামের একটি সামরিক ঘাঁটিতে। সেখানে তাকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, তার হাত ও পায়ের আঙুল কেটে ফেলা হয়েছে!
একই ঘাঁটিতে আটক রয়েছেন আরও দুই রোহিঙ্গা–মোহাম্মদ আখতার ও মোহাম্মদ ইলিয়াস। তাদের ওপরও চলছে কঠিন জেরা ও শারীরিক নির্যাতন।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে মংডুর দখল নেয় সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। এরপর থেকেই তারা রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে দখলদারির মাধ্যমে বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করছে অসংখ্য পরিবারকে। প্রতিটি রোহিঙ্গা গ্রামে প্রবেশ ও বাহিরের পথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। আরোপ করা হয়েছে চলাচলের কঠিন বিধিনিষেধ।
এছাড়া সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গবাদিপশু, মুরগি ও কৃষিপণ্য থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে। কোন যানবাহন জব্দ করা হলে তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি করছে বড় অংকের টাকা।
তবে এখানেই শেষ নয়—বাংলাদেশ থেকে আসা নতুন রাখাইন শরণার্থীদের রোহিঙ্গা গ্রামে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে তারা। এতে নতুন করে রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এই দমন-পীড়ন এবং হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং এক ধরনের জাতিগত নিধনেরই অংশ।
সূত্র: এএনএ







