কাশ্মীর নিয়ে বিশ্বকে ভুল পথে চালাতে মরিয়া নয়াদিল্লি, দমন-পীড়নের শিকার নিরীহ কাশ্মীরিরা!

কাশ্মীর নিয়ে বিশ্ববাসীকে ভুল পথে চালাতে মরিয়া নয়াদিল্লি, দমন-পীড়নের শিকার নিরীহ কাশ্মীরিরা!
কাশ্মীর নিয়ে বিশ্ববাসীকে ভুল পথে চালাতে মরিয়া নয়াদিল্লি, দমন-পীড়নের শিকার নিরীহ কাশ্মীরিরা! ছবি : সংগৃহীত

অল পার্টিজ হুররিয়ত কনফারেন্স (এপিএইচসি) এক জোরালো বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করার জন্য একের পর এক চক্রান্তমূলক অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত চায় না, বিশ্ববাসী ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে কাশ্মীরিদের উপর চলমান নিষ্ঠুর নির্যাতনের বাস্তব চিত্র জানতে পারে।

কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, হুররিয়তের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ মিনহাস বলেন, কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থার জন্য ভারত কখনও পাকিস্তানকে, আবার কখনও হুররিয়ত নেতাদের দোষারোপ করছে । অথচ প্রকৃত সত্য হলো, ভারত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং লাগামহীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে গোটা কাশ্মীরকে দখল করে রেখেছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় বাহিনী প্রতিদিন সাধারণ কাশ্মীরিদের ঘরে ঘরে অভিযান চালাচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই রাতের অন্ধকারে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যুবকদের, ছাত্রদের ও রাজনৈতিক কর্মীদের। বন্দি করা হচ্ছে শুধু সন্দেহের বশে, প্রমাণ ছাড়াই। এছাড়া কারফিউ, সার্বক্ষণিক নজরদারি, ঘরবন্দি করে রাখার মতো পদ্ধতিকে ভারতের দমননীতি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট থেকে এই বর্বরতা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সেই দিন ভারত কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা ৩৭০ ধারা বাতিল করে, এরপর থেকে পুরো ভূখণ্ডে এক নিরব যুদ্ধ শুরু হয়। AFSPA, PSA এবং UAPA-এর মতো কালো আইনগুলোকে হাতিয়ার বানিয়ে কাশ্মীরিদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। কোনো কণ্ঠ যেন ভারতবিরোধী হয়ে না উঠে, তাই ভয় দেখিয়ে, নির্যাতন করে, কারাগারে নিক্ষেপ করে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

এপিএইচসি জোর দিয়ে বলেছে, কাশ্মীর ভারতের অংশ নয়, এটি বরং ১৯৪৭ সাল থেকে জোরপূর্বক দখল করা একটি ভূখণ্ড। জাতিসংঘের একাধিক প্রস্তাব স্পষ্টভাবে বলে, এই বিরোধের সমাধান গণভোটের মাধ্যমে হতে হবে। যেখানে কাশ্মীরিরাই নির্ধারণ করবে তাদের ভবিষ্যৎ।

এদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দিল্লি-নিযুক্ত উপ-রাজ্যপাল মনোজ সিনহা সম্প্রতি কাশ্মীর নিয়ে যে আগ্রাসী ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তা কেবল এই অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকি নয়; বরং তা ভারতের অসহায় মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।

হুররিয়ত বলেছে, কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার জন্য যে অটুট মনোবল, দৃঢ়তা ও আত্মত্যাগ—তাই আজ ভারতের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। তাই তারা এখন হুমকি, দমন আর নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে।

এদিকে হুররিয়তের পক্ষ থেকে ভারত ও জম্মু-কাশ্মীরের কারাগারগুলোতে আটক সকল রাজনৈতিক বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানানো হয়েছে। এই বন্দিরা কেউ লেখক, কেউ মানবাধিকার কর্মী, কেউ সাংবাদিক, কেউ বা রাজনৈতিক কর্মী—তাদের অপরাধ শুধু একটাই: তারা কাশ্মীরের স্বাধীনতা চায়। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছে।

এপিএইচসি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ ও মুসলিম বিশ্বকে আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং অবিলম্বে কাশ্মীরের নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়ায়। কাশ্মীর এখন শুধুই এক ভূখণ্ড নয়, এটা একটি নীরব বেদনার নাম। যেখানে প্রতিদিন কেঁদে উঠে মানবতা।

আমাদের ফলো করুন