মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় আরাকান রাজ্যের বুথিডাং শহরের অন্তর্গত ‘ন্যাউং চাউং’ গ্রামে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের দোকানগুলোর ওপর দ্বিগুণ কর বসিয়েছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। তারা দাবি করেছে, গ্রাম, বাজার ও দোকান রক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছে বলেই এই কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে বাস্তবে দোকানদাররাই নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আরাকান নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদকের ভাষ্যমতে, ১০ এপ্রিল থেকে এই দ্বিগুণ কর আদায় শুরু হয়েছে। বড় বা ছোট—সব ধরনের দোকান মালিকদের এই কর দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
এর আগে সাধারণ দোকানগুলো থেকে প্রতি দোকানে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ কিয়াত (মার্কিন ডলার হিসেবে প্রায় ২৩৮ থেকে ৪৭৬ ডলার) পর্যন্ত কর নেওয়া হতো। আর বড় দোকানগুলোকে ৫০ লাখ কিয়াত পর্যন্ত (প্রায় ২৩৭৭ ডলার) কর দিতে হতো।
তিনি আরও জানান, এই গ্রামের মানুষজন রাজধানী সিত্তুই শহর থেকে খাদ্যপণ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্র আমদানি করেন। এগুলো আরাকান সেনার মাধ্যমে আনা হয়। প্রতিটি নৌকা বা জাহাজে করে মাল আনতে ৫০ থেকে ১০০ লাখ কিয়াত (প্রায় ২৩৭৭ থেকে ৪৭৫৫ ডলার) পর্যন্ত অর্থ দিতে হয়।
যদিও ন্যাউং চাউং গ্রামে এখন পর্যন্ত অন্য এলাকার মতো রোহিঙ্গা গণহত্যা বা সহিংসতা হয়নি। তবুও সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি এই এলাকাটিকে অর্থ উপার্জনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করছে। কর দ্বিগুণ করার ফলে গ্রামের মানুষদের পক্ষে জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদক আরও বলেন, বুথিডাং শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র রোহিঙ্গা ব্যবসায়ীদের ওপরই কর চাপানো হয়েছে। রাখাইন বা হিন্দু ব্যবসায়ীদের উপর এসব কর আরোপ করা হয়নি। এমনকি সাধারণ রোহিঙ্গা নাগরিকদেরও কর দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ন্যাউং চাউং হচ্ছে বুথিডাংয়ের একটি বড় গ্রাম, যেটি সিত্তুই শহরের কাছাকাছি অবস্থিত। এই গ্রামেই বুথিডাংয়ের একমাত্র সচল ও বড় বাজার রয়েছে। শহরটি দখলের পরেই সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি প্রথম এই গ্রামটি দখল করে। কারণ, এটি রাথেডাং শহরের খুব কাছেই। যা ইতিমধ্যেই তাদের দখলে চলে গেছে।
এই বাজার এখনো গ্রামের মানুষদের খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়ার শেষ ভরসা। অনেকেই বিদেশে থাকা আত্মীয়দের পাঠানো টাকার ওপর নির্ভর করেই বেঁচে আছেন। কারণ, সেখানে চাকরি বা ব্যবসার সুযোগ নেই বললেই চলে।
২০২৪ সালের মাঝামাঝি বুথিডাং দখলের পর থেকে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি বহু রোহিঙ্গা গ্রামবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযোগ, তারা নাকি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য। তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, কেউ কেউ নিখোঁজ। এর মধ্যে ওহলা ফাই গ্রামের তিন রোহিঙ্গা কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে অপহৃত হন।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে আরাকান সেনা বুথিডাংয়ের ১২টি রোহিঙ্গা গ্রামে জোরপূর্বক মানুষদের উচ্ছেদ করে। এই সময় তারা রোহিঙ্গাদের জমি ও কৃষিখেত দখল করে নেয় এবং বিনা নোটিশে তিনটি গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে অন্তত ৫০০টি ঘরবাড়ি পুড়ে যায়।
পরে এই গ্রামগুলোর পরিত্যক্ত ঘরগুলোতে রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর পরিবারগুলোকে বসবাস করানো হয়। রোহিঙ্গারা তখন বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া অথবা ইয়াঙ্গুনে পালিয়ে যায়। এছাড়া যেসব শিশু ও বৃদ্ধ রোহিঙ্গা থেকে গেছেন, তাদের অনেককে জোর করে শ্রমে লাগানো হয়েছে।
সূত্র: এএনএ







