মংডুতে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি-সম্পদ লুটপাটে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম আরাকান আর্মির

মংডুতে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি-সম্পদ লুটপাটে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম আরাকান আর্মির
মংডুতে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি-সম্পদ লুটপাটে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম আরাকান আর্মির। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের আরাকান রাজ্যের মংডু শহরে আবারও রোহিঙ্গাদের সম্পদ জোরপূর্বক দখল করা শুরু করেছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি (AA)। শহরের ’মিওমা কানিন তান’ এবং ‘মাউং নি’ পাড়ায় রোহিঙ্গাদের ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ি ও মূল্যবান সম্পদ দখলের মাধ্যমে তাদেরকে চূড়ান্তভাবে বিতাড়িত করার পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরাকান নিউজ এজেন্সিকে জানান, আরাকান আর্মির সদস্যরা রোহিঙ্গাদের মালিকানাধীন বাড়ি ও অন্যান্য সম্পত্তিতে প্রবেশ করে সেগুলোর দরজায় ‘এই সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। এরপরই সেগুলো তালাবদ্ধ করে রাখে। এসব দখলকৃত সম্পদের মধ্যে রয়েছে বসতবাড়ি, গেস্টহাউস, হোটেল এবং দোকানপাট, যেগুলো একসময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর হাতে পরিচালিত হতো।

এর আগেও মংডুর ১ম, ২য়, ৪র্থ ও ৫ম ওয়ার্ডসহ আশপাশের এলাকায় রোহিঙ্গাদের সম্পদ দখলের ঘটনা ঘটেছে। রোহিঙ্গারা যখন পালিয়ে যাওয়া পর আবার ফিরতে শুরু করে, তখন থেকেই রাখাইন মগ জাতিগোষ্ঠীর কিছু দল এবং সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির সহায়তায় তাদের ঘরবাড়িতে লুটপাট এবং দখলের ঘটনা বাড়তে থাকে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে মংডু এবং আশেপাশের অঞ্চল থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া হয়। সেই সময় তারা ঘরবাড়ি ও সব সম্পদ ফেলে পালাতে বাধ্য হয়।

২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে আরাকান রাজ্যের উত্তরে আবারও সংঘাত শুরু হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির সম্পর্ক চরম খারাপ হয়ে পড়ে। যদিও শুরুতে এই আর্মি নিজেদের একটি ‘অসাম্প্রদায়িক’ রাখাইন স্বাধীনতাকামী শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর মংডু দখলের পর থেকেই একের পর এক রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে থাকে।

এর মধ্যে রয়েছে—ঘরবাড়ি দখল, রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করে চরম মানবেতর অবস্থায় ফেলে রাখা, তাদের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ, প্রতিটি গ্রামে চেকপোস্ট বসিয়ে নজরদারি, খাদ্যসামগ্রী ও রসদ জোরপূর্বক আদায় এবং নতুন করে বাংলাদেশ থেকে আগত রাখাইনদের রোহিঙ্গা পল্লীতে বসতি স্থাপন।

এছাড়াও রোহিঙ্গাদের দোকান, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি থেকে চড়া হারে কর আদায়, ফসল ও যানবাহন জব্দ করে পরে তা ফেরত দিতে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করার ঘটনাও ঘটছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা।

আমাদের ফলো করুন