ভারতের উত্তরাখণ্ডে গভীর রাতে দরগা গুঁড়িয়ে দিল হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন!

ভারতের উত্তরাখণ্ডে গভীর রাতে দরগা গুঁড়িয়ে দিল হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন!
ভারতের উত্তরাখণ্ডে গভীর রাতে দরগা গুঁড়িয়ে দিল হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন! ছবি : সংগৃহীত

ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের রুদ্রপুর শহরে গভীর রাতে একটি দরগা গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত প্রায় ৩টার দিকে পুলিশি পাহারায় চালানো এই অভিযান নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দারা। তারা বলছেন, ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য কোনো রকম আদালতের রায় বা স্থানীয় মতামত গ্রহণ করা হয়নি—যা প্রশাসনের একতরফা ও দমনমূলক আচরণের পরিচয়।

দরগা ভাঙার ভিডিও ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—রাতের অন্ধকারে ধর্মীয় স্থান গুঁড়িয়ে দেওয়ার পেছনে প্রশাসনের কী অভিপ্রায় ছিল?

স্থানীয় মুসলিমদের দাবি, দরগাটি বহুদিন ধরেই মানুষ ব্যবহার করে আসছিল। সেটি নিয়ে জমি-সংক্রান্ত কোনো আদালতের চূড়ান্ত রায় ছিল না। তবু প্রশাসন ‘অবৈধ দখলের’ অজুহাতে ধর্মীয় স্থাপনাটি রাতের আঁধারে বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।

একজন প্রবীণ মুসলিম বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা রাতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুলডোজার এসে দরগা গুঁড়িয়ে দেয়। প্রশাসনের লোকেরা যেন আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করার প্রয়োজনই মনে করেনি। এটা শুধু জায়গা নয়, আমাদের আত্মার জায়গা—তা রাতের আঁধারে ভেঙে দেওয়া মানে আমাদের সম্মান ভাঙা।’

এই ঘটনার ঠিক আগে গত ১৫ এপ্রিল, হরিয়ানার ফরিদাবাদে ৫০ বছরের পুরনো আকসা মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়েছে পৌর কর্পোরেশন। অথচ সেই মসজিদের বিষয়টি এখনো সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। আদালতের রায় হওয়ার আগেই মসজিদ ভাঙা কতটা আইনসংগত—তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।

ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে এমন আচরণে বহুজনই সন্দেহ করছেন, ‘উন্নয়ন’ আসলে কি নিছক অজুহাত? দেশজুড়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে—হিন্দু মন্দির বা গির্জার ক্ষেত্রে প্রশাসন এমন তৎপরতা দেখায় না কেন?একজন মানবাধিকার কর্মী বলেন, ‘সরকারি জমি দখলের অভিযোগ থাকলে তারও বিচারিক প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু মুসলিমদের ধর্মীয় স্থানগুলোই বারবার নিশানা হওয়া তার বিচার না হয়ে শাস্তি হয়ে যাওয়া—এটা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে প্রশাসন এক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।’

এই ধরনের ঘটনাগুলো কেবল ধর্মীয় অবমাননার প্রশ্ন তোলে না, বরং নাগরিক অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক ভারসাম্য নিয়েও গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করে। আদালতের রায় ছাড়াই সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ভাঙার সিদ্ধান্ত কাদের ইচ্ছায় হয়—এমন প্রশ্ন এখন ভারতীয় মুসলিমদের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী—ভারতের সংবিধান প্রতিটি নাগরিককে সমান অধিকার দিয়েছে। তবে উত্তরাখণ্ড ও ফরিদাবাদের ঘটনা দেখিয়ে দিল, সেই সমতার কথা এখন অনেকটাই কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ।

আমাদের ফলো করুন