গুজরাটের গান্ধীনগরের সানতেজ এলাকায় ঘটে গেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। ২১ এপ্রিল রাতে সেখানে পুড়ে মারা গেছেন এক মুসলিম যুবক। তার পরিবার বলছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল। যারা নিজেদের ‘গো-রক্ষক’ বলে দাবি করে।
নিহত যুবকের নাম মোহাম্মদ ভুরা হাবিবুল্লাহ। তিনি পেশায় ছিলেন একজন পণ্য পরিবহনকারী। ঘটনার দিন, সকাল ১০টার দিকে তিনি তার এক সঙ্গী সৈয়দ মোহাম্মদ রফিক-কে নিয়ে পণ্য পরিবহনের জন্য ঘর থেকে বের হন। এরপর তারা আর ফেরেননি।
পরদিন সকাল ১১টার দিকে নর্মদা ক্যানালের কাছে সানতেজ এলাকায় পাওয়া যায় এক পুড়ে যাওয়া গাড়ি। সেই গাড়ির ভেতর পাওয়া যায় ভুরার পুরোপুরি পোড়া মরদেহ। তার সঙ্গী রফিক গাড়ির আশপাশেই মাটিতে পড়ে ছিলেন। তখন তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় ছিলেন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এখন তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, এই ঘটনার পেছনে রয়েছে বজরং দল। তারা দাবি করেছে, গত পাঁচ দিন ধরে ভুরা ও রফিককে হুমকি দিয়ে আসছিল ওই সংগঠনের লোকেরা। কেননা তারা গরু বেচা-কেনার জন্য পরিবহন করত। পরিবার বলেছে, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং পুরোপুরি পরিকল্পিত হত্যা।
কিন্তু পুলিশ ভিন্ন কথা বলছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ভুরা ও রফিক গাড়ি নিয়ে ব্যয়না গ্রাম দিয়ে যাওয়ার সময় তারা একটি রোড ডাইভারশন উপেক্ষা করে ফেলেছিলেন। পুলিশ বলছে, ‘সম্ভবত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওরা কোথাও ধাক্কা মারে এবং তাতেই আগুন ধরে যায়। এরপর ওরা গাড়ির ভেতরেই আটকা পড়ে পুড়ে যায়।’
পুলিশ আরও দাবি করেছে, তারা কোনো ধরনের হামলার বা মারধরের চিহ্ন পায়নি। ফলে তারা এই ঘটনাকে আপাতত একটি দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখছে।
তবে এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় অনেকে। AIMIM দলের আহমেদাবাদ শাখার মুখপাত্র আসলাম শেখ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, গুজরাট মডেলের নামে আজ বিজেপি মুসলমানদের রক্তকে পানির চেয়েও সস্তা করে দিয়েছে। তারা মাংস পাওয়া গেছে বলেই তারা নিরীহ মুসলিমদের ওপর হিংস্র জানোয়ারের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে, চাই সেটা গরুর মাংস হোক বা অন্য কিছু। এগুলো বিচার করার জন্য আদালত আছে। কাউকে নিজের হাতে বিচার করার অধিকার নেই।
এই ঘটনা ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতারা ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করছেন।
পরিবার চায়—রফিক সুস্থ হয়ে ওঠার পর তার জবানবন্দি নেওয়া হোক এবং পুরো ঘটনার পেছনে কারা আছে, তা খুঁজে বের করা হোক।
সূত্র: এমএম







