নিউজনেস্ট

মংডুতে রোহিঙ্গাদের ওপর সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির জোরপূর্বক সেনা নিয়োগ, উদ্বেগে স্থানীয়রা

মংডুতে রোহিঙ্গাদের ওপর সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির জোরপূর্বক সেনা নিয়োগ, উদ্বেগে স্থানীয়রা
মংডুতে রোহিঙ্গাদের ওপর সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির জোরপূর্বক সেনা নিয়োগ, উদ্বেগে স্থানীয়রা। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় আরাকান রাজ্যের বুথিডাং শহরে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির এক কমান্ডার মংডু এলাকার প্রতিটি গ্রাম থেকে ১০ থেকে ৬০ জন রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীকে জোরপূর্বক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসকদের ডেকে বিভিন্ন ঘাঁটিতে এ বিষয়ে একাধিক বৈঠকও হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মংডুর উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে মিয়াউ টাউন এবং পিয়িন ফিউ ঘাঁটিতে স্থানীয় গ্রামপ্রধানদের ডেকে জোরপূর্বক সেনা নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী পুরুষ ও ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীদের ৪৫ দিনের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তায় ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।

আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে গ্রামভেদে নির্দিষ্ট সংখ্যায় লোক চাওয়া হয়েছে—মিংলার জি গ্রাম থেকে ৬০ জন, কিয়াউক হ্লি কা ও টি চাউগ পিউ জো থেকে ২০ জন করে, জিন পিন ন্যা ও থাজাই কোনি থেকে ১৫ জন করে এবং ইয়ার থেইত গ্রাম থেকে ১০ জন। নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনো পরিবর্তন ছাড়াই এসব সংখ্যা পূরণ করতে হবে।

এক গ্রামপ্রধান ANA-কে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির কমান্ডাররা সরাসরি কাউকে অপহরণ না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও স্থানীয় প্রশাসকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে তরুণদের রাজি করিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অনেক পরিবার ভীত ও উদ্বিগ্ন। কারণ, সামরিক প্রশিক্ষণের পর এসব তরুণ-তরুণীকে দূরবর্তী যুদ্ধে পাঠানো হতে পারে। অনেকেই পরিবার ও সন্তানদের রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে রাজি নন। কিছু পরিবার জানিয়েছে, তারা তাদের প্রিয়জনদের খুঁজে পাচ্ছেন না—যারা এ বছরের শুরুতে একই ধরনের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন।

২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে আরাকান সেনা বিভিন্ন গ্রামে নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নামে বহু রোহিঙ্গা যুবককে নিযুক্ত করে। কিন্তু এরপর থেকে তাদের পরিবার তাদের কোনো খোঁজখবর পায়নি।

উল্লেখযোগ্য নিয়োগের মধ্যে রয়েছে:

১ এপ্রিল: নগান চাউগ গ্রাম থেকে ৩০ জন

৫ এপ্রিল: কিয়াকান থেকে ২৭ জন

৮ মে: কিয়েত ইউই পিন থেকে ১১ জন, ভাঙ্গা খোইয়া থেকে ২০ জন

১৫ মে: অ শিন কিয়া থেকে ২৭ জন

১৭ জুলাই: লাথা থেকে ৩২ জন, মিউ অ থেকে ৫ জন

আগস্ট: মাউন নিঈ থেকে ১৪ জন, কানিন তান থেকে ২২ জন, ইয়ার থেইত কাই থেকে ৭ জন, শোয়ে জার থেকে ১২ জন

গত কয়েক মাসে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও জোরালো হয়েছে। বিশেষ করে মংডু ও বুথিডাংয়ের মতো বিতর্কিত এলাকায় রোহিঙ্গা জনগণের ওপর চাপ বেড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, আরাকান আর্মি এখন রোহিঙ্গাদের একরকম বাধ্য করেই তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের নভেম্বরে আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে এবং রাজ্যের বিস্তৃত এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। এতে রোহিঙ্গারা উভয়পক্ষের সহিংসতার শিকার হয়। একদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ২০১৭ সালের গণহত্যা—অন্যদিকে আরাকান আর্মির জোরপূর্বক নিয়োগ, সহিংসতা ও দখলদারিত্বের শিকার হন তারা। যেই যাঁতাকলে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বই আজ প্রশ্নের মুখে।

২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর মংডু দখলের পর থেকে আরাকান সেনা লাগাতার রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন করে চলেছে। বাড়িঘর জব্দ, মিথ্যা অভিযোগে তালাবদ্ধ, মূল্যবান সম্পদ বাজেয়াপ্ত, গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ—সবই যেন এক পরিকল্পিত দখলনীতি। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা এখন জীবন-মরণ সংকটে।

উপমহাদেশ ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত