মুসলিম হত্যা মানেই দেশপ্রেম আর হিন্দু হত্যা হয় সন্ত্রাসবাদ: ভারতে ধর্মীয় বৈষম্যের নির্মম চিত্র

মুসলিম হত্যা মানেই দেশপ্রেম আর হিন্দু হত্যা হয় সন্ত্রাসবাদ: ভারতে ধর্মীয় বৈষম্যের নির্মম চিত্র
মুসলিম হত্যা মানেই দেশপ্রেম আর হিন্দু হত্যা হয় সন্ত্রাসবাদ: ভারতে ধর্মীয় বৈষম্যের নির্মম চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৭ জন হিন্দু পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায় গোটা দেশে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এ হামলার নিন্দায় সরব হয়েছে সকল মহল। মুসলিম সম্প্রদায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। ইসলামের শিক্ষায় বলা হয়েছে, একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা মানে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করা। তাই মুসলিম সমাজ এ হামলাকে ‘মানবতা বিরোধী অপরাধ’ বলে চিহ্নিত করে দোষীদের দ্রুত বিচার দাবি করেছে।

তবে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সমাজ ও রাষ্ট্রে দেখা যাচ্ছে এক গভীর দ্বিমুখী মানসিকতা। বিশ্লেষকদের মতে, হিন্দু নাগরিক নিহত হলে যেভাবে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে, মুসলিমদের হত্যাকাণ্ডে ঠিক ততটাই নীরবতা দেখা যায়।

গত এক দশকে দেশে গোমাংস বা গরু রক্ষার নামে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ২০০-রও বেশি নিরীহ মুসলিম। মোহাম্মদ আখলাক, আলিমুদ্দিন আনসারি, জুনায়েদ—তাঁদের নাম আজ গণপিটুনির ইতিহাসে চিরস্থায়ী। কিন্তু এসব ঘটনায় শাসকদলের বড় নেতা বা হিন্দু সমাজের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে কখনোই তীব্র নিন্দা বা প্রতিরোধ দেখা যায়নি।

২০১৮ সালে বিজেপি নেতা জয়ন্ত সিনহা গণপিটুনিতে দণ্ডিতদের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানান। বিলকিস বানু ধর্ষণ মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের ছেড়ে দিয়ে বীরোচিত সম্মান জানানো হয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও হিন্দু সংগঠনের পক্ষ থেকে। এমনকী কুম্ভ মেলায় বিদেশি গোমাংসখোরদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হলেও, মুসলিম ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হয়—যা স্পষ্ট ধর্মীয় বৈষম্যের প্রমাণ।

২০২৩ সালের ৩১ জুলাই পালঘরে আরপিএফ কনস্টেবল এক ট্রেনে ধর্মপরিচয় জেনে তিন মুসলিমকে গুলি করে হত্যা করেন। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ভারতে থাকতে হলে ‘মোদি-যোগী’ বলতে হবে। এত বড় ঘটনায়ও রাজনৈতিক স্তরে বড়সড় প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

এদিকে পেহেলগাম হামলার পর আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেন, ‘হিন্দুরা কখনও ধর্ম জিজ্ঞেস করে কাউকে হত্যা করে না।’ কিন্তু বাস্তবতা বলছে, গোরক্ষা বা ধর্মীয় বিদ্বেষকে কেন্দ্র করে বহু মুসলিম নাগরিক শহিদ হয়েছেন, বাড়িঘর হারিয়েছেন, বঞ্চিত হয়েছেন আইনের ন্যায্যতা থেকে।

পেহেলগামের ঘটনার পর কাশ্মীরি মুসলিম ছাত্রছাত্রী ও নাগরিকদের ওপর যেভাবে হামলা ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা।

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, এই দ্বিচারিতা ভারতের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সহিংসতা কোনো ধর্মের একচ্ছত্র মালিকানা নয়—নিরীহ হিন্দুদের মতোই নিরীহ মুসলিমদের রক্তের মূল্যও সমান হওয়া উচিত।

সংখ্যালঘু নেতারা বলছেন, শুধু সন্ত্রাসবাদ নয়, গোঁড়ামি ও ঘৃণা-রাজনীতিও এক ধরনের সামাজিক সন্ত্রাস—যার শিকার দিনকে দিন হয়ে উঠছে ভারতীয় মুসলিমরা।

আমাদের ফলো করুন