মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডু শহরে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরাকান আর্মি’। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই গ্রামে হানা দিয়ে অন্তত পাঁচটি রোহিঙ্গা পরিবারকে গৃহহীন করে দিয়েছে তারা।
ঘটনাটি ঘটেছে মংডুর উত্তরের ‘ও শি কিয়া’ গ্রামে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রায় ১০০ জন অস্ত্রধারী সেনা ওই গ্রামের একটি পাড়ায় ঢুকে পড়ে। তারা দাবি করে, এসব বাড়িতে নাকি রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন ‘এআরএসএ’র (ARSA) সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছে। তবে এলাকাবাসীর বক্তব্য, এমন কোনো প্রমাণ বা অস্ত্র পাওয়া যায়নি, তারপরও জোর করেই আগুন লাগানো হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘আরাকান এক্সপ্রেস নিউজ’ জানিয়েছে, অভিযানের সময় গ্রামবাসীদের দড়ি দিয়ে বেঁধে নির্দয়ভাবে মারধর করে আরাকান আর্মির সদস্যরা। এখনো কোনো আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। আর তাঁদের অবস্থা নিয়েও কিছু জানা যাচ্ছে না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই বাহিনী ইচ্ছে করেই রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। ‘এআরএসএ’র নামটাকে অজুহাত বানিয়ে প্রায়ই তারা সাধারণ মানুষদের ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, মালামাল কেড়ে নিচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই আরাকান আর্মি একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের মুখে পড়ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে—রোহিঙ্গা বাড়ি জোর করে বন্ধ করে দেওয়া, মিথ্যা অভিযোগে ঘরবাড়ি ও জমিজমা দখল, রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে রাখাইনদের বসতি গড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া, প্রতিটি গ্রামের চারপাশে চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচল সীমিত করে ফেলা, দোকান, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগির ওপর ভারী কর বসানো, খাদ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্র জোর করে আদায় করা সহ আরো কত কিছু।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি মিয়ানমার সরকারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে লড়াই করছে। এই সংঘাতে কিছু কিছু এলাকা তারা নিয়ন্ত্রণেও নিয়েছে। কিন্তু দুই পক্ষের এই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় শিকার হয়ে উঠেছে নিরীহ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। একদিকে সরকারি বাহিনীর নিপীড়ন, অন্যদিকে বিদ্রোহীদের অত্যাচারে তারা পড়েছে চরম মানবিক সংকটে।
এদিকে ২০১৭ সালের সেনা অভিযানে মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন যেসব রোহিঙ্গা এখনও এখানে আছেন। তারাও ফের পড়ছেন সহিংসতার মুখে।
সূত্র: এএনএ