যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের তথ্য গোপনে ভারতীয় মিডিয়ার নাটকীয় লুকোচুরি

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের তথ্য গোপনে ভারতীয় মিডিয়ার নাটকীয় লুকোচুরি
যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের তথ্য গোপনে ভারতীয় মিডিয়ার নাটকীয় লুকোচুরি। ছবি: প্রতীকী

কাশ্মীরের পেহেলগাময়ে পর্যটকদের ওপর হামলার পর পাকিস্তানে পাল্টা সামরিক অভিযান চালিয়েছে ভারত। এর জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ সংঘর্ষে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে বলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দাবি।

কিন্তু যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের এই খবরকে কেন্দ্র করে ভারতীয় গণমাধ্যমে শুরু হয়েছে নাটকীয় লুকোচুরি। প্রথমে কিছু সংবাদমাধ্যম ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর প্রকাশ করলেও পরে তা একে একে গায়েব করে ফেলে।

বিশ্বস্ত সূত্র ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা গেছে, ‘দ্য হিন্দু’, ‘জি নিউজ’ ও ‘রিপাবলিক নিউজ’ প্রথম দিকে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর প্রকাশ করে। তবে অদৃশ্য কোনো চাপে তারা পরবর্তীতে সেই সংবাদ সরিয়ে ফেলে।

এর আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাকে জানান, ভারতের তিনটি রাফাল, একটি সু-৩০ এবং একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান তারা গুলি করে ভূপাতিত করেছে। সেইসঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর ধ্বংস করার দাবিও করে তারা।

এই ঘোষণার পরপরই ভারতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম নিজেদের বিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর শেয়ার করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই সে সব খবর গায়েব হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন—ভারতের মিডিয়া কি সত্য গোপন করছে? না কি তাদের উপর কোনো ‘চাপ’ কাজ করছে?

এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, ভারতশাসিত কাশ্মীরের পাম্পোর এলাকায় একটি অজ্ঞাত উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। এটি কোন দেশের বিমান, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

অন্যদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, পাঞ্জাবের আকালি খুর্দ গ্রামের কাছে একটি সামরিক বিমান ভেঙে পড়েছে। ঘটনাস্থল ভাটিন্ডার ভিসিয়ানা বিমানঘাঁটি থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে এবং ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই দুর্ঘটনায় একজন নিহত ও নয়জন আহত হয়েছেন। তবে কী কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা এখনো দেয়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

ভারতের এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘ভারতের আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী।’

যুদ্ধ পরিস্থিতি যতই উত্তপ্ত হচ্ছে, ততই জটিল হয়ে উঠছে তথ্যের লুকোচুরি। যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন যুদ্ধ চলছে, তেমনি চলছে প্রচারণার লড়াইও।

জনমনে প্রশ্ন উঠছে—ভারতের তথাকথিত ‘মুক্ত গণমাধ্যম’ আসলে কতটা স্বাধীন? নাকি তারা কেবলই সরকারের মুখপত্রে পরিণত হয়েছে? যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয়ের খবর ঢাকতেই কি এমন মরিয়া প্রচেষ্টা? সংবাদ প্রকাশ করে পরে তা মুছে ফেলা শুধু পেশাগত দায়িত্বহীনতাই নয়, একরকম তথ্যপ্রবাহের সঙ্গে প্রতারণাও বটে। সত্য লুকিয়ে, যুদ্ধজয়ের গল্প সাজিয়ে, নিজেদের জনগণকে ভুল তথ্য দিয়ে যে মিডিয়া চলে, সেটি আর গণমাধ্যম নয়—বরং রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডার যন্ত্রমাত্র।

আমাদের ফলো করুন