আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো উত্তাল রাজধানীর শাহবাগ। গতকাল বিকাল থেকে শুরু হওয়া গণজমায়েত আজ শনিবার সকালেও অব্যাহত রয়েছে। শাহবাগ মোড় অবরোধ করে হাজারো ছাত্র-জনতা ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই’ স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে পুরো এলাকা।
এ দাবিকে ঘিরে গঠিত হয়েছে তিন দফা আন্দোলনের রূপরেখা—
১. আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে।
৩. জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।
এই দাবির পক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে আন্দোলন চলছে। শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চ, কওমি মাদরাসার ছাত্রসহ অসংখ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
‘বাংলাদেশ উইদাউট আওয়ামী লীগ’—হাসনাতের ঘোষণা
শাহবাগে আয়োজিত সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন,‘সেই দিন থেকে বাংলাদেশের অগ্রগতি শুরু হবে যেদিন এই দেশের টাইটেল হবে ‘বাংলাদেশ উইদাউট আওয়ামী লীগ’।’তিনি ঘোষণা দেন, যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন আসে, ততক্ষণ অবরোধ চলবে। এটিই হবে ‘দ্বিতীয় অভ্যুত্থান’-এর সূচনা।
তার ডাকে সাড়া দিয়ে গতকাল রাত থেকে শুরু হওয়া অবস্থান পরিণত হয় বিশাল গণজমায়েতে। মঞ্চ তৈরি করা হয় শাহবাগে, চলে জুমার নামাজ, দেয়া হয় উত্তেজনাকর সব স্লোগান:‘ব্যান ব্যান আওয়ামী লীগ’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’—এমন নানা শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছে রাজধানী।
সরকার বিবেচনায় নিয়েছে দাবি, আইনি প্রক্রিয়া চলমান
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের সহিংস কার্যক্রমের উল্লেখকেও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরকার জানিয়েছে, আইসিটি আইন সংশোধন করে সংগঠনের বিচারের বিধান যুক্ত করা হবে। পাশাপাশি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, শিগগিরই যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকেও নিষিদ্ধ করা হবে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, উপদেষ্টা পরিষদে এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। আইনের বাধা নেই, রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে দ্রুতই নিষিদ্ধ করা যাবে আওয়ামী লীগকে।
এদিকে শাহবাগে গণজমায়েতের পাশাপাশি মিছিল ও অবস্থানের কারণে আশপাশের এলাকা যেমন সায়েন্সল্যাব, টিএসসি, প্রেস ক্লাব, বাংলামোটরসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ঢাকার উত্তরা, সিদ্ধিরগঞ্জ, সাভারসহ বিভিন্ন হাইওয়েতে স্বল্প সময়ের জন্য অবরোধ হলেও এনসিপি নেতাদের নির্দেশে সেগুলো তুলে নেয়া হয়।
তবে শাহবাগ অবরোধে কোনো ছাড় নেই আন্দোলনকারীদের।‘প্রজ্ঞাপন ছাড়া শাহবাগ ছাড়ছি না’—এ ঘোষণা দিয়ে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘রাতের আঁধারে মিছিল’ ও উসকানিমূলক পোস্টের পর থেকেই দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হয়। তবে সেসময় সরকারের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ঘাটতির কারণে পিছু হটতে হয়। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন—সরকার নিজেই বলছে, আইন সংশোধন করে দলীয় বিচারের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বর্তমানে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে—সরকার আইনি প্রক্রিয়ার কথা বলছে, আর আন্দোলনকারীরা চাইছে তাৎক্ষণিক প্রজ্ঞাপন।রাজপথে এখন উত্তেজনা, প্রতীক্ষা ও প্রত্যয়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এ ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন বাঁক রচনার পথে। দ্বিতীয় অভ্যুত্থানের ঘোষণা, আইনি সংস্কারের উদ্যোগ এবং গণআন্দোলনের জনমত—সবমিলিয়ে একটি বড় সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছে দেশ।
নিউজনেস্ট ডেস্ক
- নিউজনেস্ট ডেস্ক#molongui-disabled-link
- নিউজনেস্ট ডেস্ক#molongui-disabled-link
- নিউজনেস্ট ডেস্ক#molongui-disabled-link
- নিউজনেস্ট ডেস্ক#molongui-disabled-link