সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধ যেন প্রতি মুহূর্তে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এবার সেই সংঘাত আছড়ে পড়েছে কারাগার ও শরণার্থীশিবিরের মতো মানবিক স্থাপনাতেও। গত দুই দিনে সন্ত্রাসী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর চালানো হামলায় অন্তত ৩৩ জন শহিদ হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় সূত্র।
ড্রোনের নিশানায় কারাগার
গতকাল শনিবার ১০ইমে পশ্চিম সুদানের এল-ওবেইদ শহরে একটি সেনানিয়ন্ত্রিত কারাগারে আরএসএফ ড্রোন হামলা চালায়। এতে অন্তত ১৯ জন শাহাদাত বরণ করেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ৪৫ জন। স্থানীয় এক চিকিৎসা সূত্র জানায়, এই কারাগারটি ছিল উত্তর কোরদোফান প্রদেশের রাজধানীতে অবস্থিত এবং মূলত সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন।
শরণার্থীশিবিরেও রক্তপাত
এর আগের দিন শুক্রবার, দারফুরের এল-ফাশের শহরের কাছে আবু শৌক শরণার্থীশিবিরে গোলাবর্ষণ চালানো হয়। এতে একই পরিবারের অন্তত ১৪ জন শহিদ হন। জাতিসংঘ ইতিমধ্যে এই শিবিরে দুর্ভিক্ষের সতর্কতা জারি করেছে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছেন, আরএসএফের এই হামলা ছিল ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভয়াবহ।’আবু শৌক শিবিরের পাশেই রয়েছে জমজম শিবির, যেটি গত মাসেই আরএসএফের হামলায় প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে।
যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে
গতকাল শনিবার আরও দুটি শহর—দারফুরের নিয়ালা ও এল-জেনিনায়—আরএসএফের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে সুদানের সেনাবাহিনী। সামরিক সূত্র জানিয়েছে, এসব হামলায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরএসএফের অস্ত্রাগার ধ্বংস হয়েছে।
এদিকে আরএসএফ দাবি করেছে, তারা পশ্চিম কোরদোফানের আল-নাহুদ শহর দখল করেছে। এই শহরটি সেনাবাহিনীর জন্য দারফুরে গুরুত্বপূর্ণ এক রসদ সরবরাহ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।চলতি মাসের শুরু থেকে আরএসএফ পোর্ট সুদানের ওপর ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে। সেখানেই বর্তমানে সেনাসমর্থিত সামরিক সরকার যুদ্ধকালীন রাজধানী গড়ে তুলেছে। এসব হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং দেশের শেষ কার্যকর বেসামরিক বিমানবন্দর।
কে সহায়তা করছে সন্ত্রাসী এই গোষ্ঠীকে?
সুদানের সামরিক বাহিনী অভিযোগ করেছে, আরএসএফকে ড্রোন সরবরাহ করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। কারণ, আরএসএফের নিজস্ব বিমান বাহিনী নেই।
ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ
এই যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে, সেনাপ্রধান আব্দুল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও আরএসএফ কমান্ডার মোহাম্মদ হামদান দাগালোর মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জেরে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ।
বর্তমানে দেশটি কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত—উত্তর, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল রয়েছে সেনাবাহিনীর দখলে; আর পশ্চিমের দারফুর ও দক্ষিণাঞ্চলের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে আরএসএফ ও তাদের মিত্ররা।
দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক মহল সুদানকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের কেন্দ্রবিন্দু বলে বিবেচনা করছে।
মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত
যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। সেখানে খাবার, পানি, চিকিৎসা—সবকিছুরই অভাব তীব্রতর হচ্ছে। বিশেষ করে শরণার্থীশিবিরগুলোতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। জাতিসংঘ বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও কোনো পক্ষই তার তোয়াক্কা করছে না।
মোটকথা, কারাগার থেকে শরণার্থীশিবির—সুদানে এখন আর কোনো স্থানই নিরাপদ নয়। দুই বছরের এই গৃহযুদ্ধে দেশটি ধ্বংসের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া এই সংকটের অবসান অসম্ভব। তবে সেটা কবে, কীভাবে—তা এখনও অনিশ্চিত।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক#molongui-disabled-link