নিউজনেস্ট

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ঘৃণা উসকে দিচ্ছেন পবন কল্যাণ

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ঘৃণা উসকে দিচ্ছেন পবন কল্যাণ
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ঘৃণা উসকে দিচ্ছেন পবন কল্যাণ। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও জনসেনা দলের নেতা পবন কল্যাণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে গুরুতর মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী বসতি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একদিকে যেমন বিরাট হুমকি, অন্যদিকে তারা স্থানীয় তরুণদের কাছ থেকে চাকরির সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে।

গতকাল ২০ মে বিজয়ওয়াড়ার বিমানবন্দরে পবন কল্যাণ দাবি করেন, রোহিঙ্গারা অন্ধ্র প্রদেশে চাকরি কেড়ে নিচ্ছে এবং নিরাপত্তার হুমকি তৈরি করছে। অথচ বাস্তবতা হলো—এই বিপন্ন জনগোষ্ঠীকে বারবার বিতাড়নের মুখে ফেলে, ন্যূনতম মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের মুখে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গারা। তাদের বড় একটি অংশ এখনো জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা UNHCR-এর অধীনে নিবন্ধিত, যার সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ হাজারের মতো। এদের বেশিরভাগই অস্থায়ী ক্যাম্পে অমানবিক পরিবেশে জীবনযাপন করছে, পর্যাপ্ত খাদ্য, চিকিৎসা বা শিক্ষার সুযোগ ছাড়াই।

পবন কল্যাণের অভিযোগ, তারা নাকি সোনার গয়নার কারখানায় ঢুকে রাজ্যের তরুণদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শরণার্থীদের হাতে সরকারি চাকরি তো দূরের কথা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা অস্থায়ী, খণ্ডকালীন ও অত্যন্ত কম মজুরির কাজ পায়। এই ধরনের বক্তব্য শুধু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায় না, বরং স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের সংঘাত তৈরির উসকানিও দেয়।

আরও ভয়াবহ হলো, তিনি অভিযোগ করেছেন রোহিঙ্গারা নাকি প্রশাসনের সহায়তায় রেশন কার্ড ও ভোটার আইডি পাচ্ছে। অথচ ভারতের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিক—বিশেষ করে শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিরা ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারে না। কাজেই এই অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সম্প্রতি ভারত সরকার রোহিঙ্গাদের ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে চিহ্নিত করে ৩০ দিনের মধ্যে তাদের কাগজপত্র যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে অনেক নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার ও জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যেখানে তাদের প্রাণনাশের ঝুঁকি রয়েছে।

আসাম সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা রোহিঙ্গাদের সরাসরি বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে, যা আন্তর্জাতিক শরণার্থী কনভেনশন এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই পদক্ষেপ একপ্রকার ‘পুশব্যাক’—যার মাধ্যমে ভারত রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক জলসীমায় ফেলে দিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ এই ধরনের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়ে বলেছেন, শরণার্থীদের এভাবে মর্যাদাহীনভাবে তাড়িয়ে দেওয়া কোনো সভ্য রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না।

রোহিঙ্গারা পৃথিবীর অন্যতম নিপীড়িত জনগোষ্ঠী। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিকরা যদি ঘৃণার আগুনে ঘি ঢালেন, তবে তা শুধু একটি সম্প্রদায়ের নয়, সমগ্র মানবতার জন্যই হুমকি। এখন দরকার সহানুভূতি, সংবেদনশীলতা এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা—নয়তো মানবিকতা হারিয়ে যাবে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির জুজুর ভিড়ে।

উপমহাদেশ ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত