চোখের সামনে পুলিশ বাবা-মাকে ধরে নিয়ে গেল। তারপর মাত্র দু’দিনের মাথায় সমুদ্রের মাঝ থেকে মিয়ানমার থেকে ফোন আসে—‘আমাদের পানির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা সাঁতরে মিয়ানমারে ফিরে এসেছি।’
এই ভয়াবহ বর্ণনাটা দিল্লির এক তরুণ রোহিঙ্গা শরণার্থীর। তার মা-বাবা এখন কোথায়, সেটা সে জানেও না। তবে জানা গেছে, তাদের সঙ্গে আরও অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গাকে এমনই নির্মমভাবে সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এমন ভয়ঙ্কর ঘটনাকে ঘিরে এখন আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, এপি’র মতো প্রভাবশালী গণমাধ্যমে এই ‘অমানবিক’ ঘটনার খবর ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। আর তাতেই নড়েচড়ে বসেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবাধিকার দপ্তর জানায়, তারা ভারতের এই আচরণকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত ও অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে দেখছে এবং বিষয়টি তদন্তে একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছে।
কী ঘটেছিল ৮ মে’র রাতে?
দিল্লির ওই তরুণ রোহিঙ্গা জানান, তার চোখের সামনে তার মা-বাবাসহ ৪১ জন রোহিঙ্গাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় ৬ মে। পরে জানা যায়, তাদের বিমানযোগে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮ মে, ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজ থেকে সবাইকে লাইফ জ্যাকেট দিয়ে আন্দামান সাগরের পানিতে নামিয়ে দেওয়া হয়। তীরে পৌঁছাতে তারা বাধ্য হন সাঁতরে।
এই দলে শিশুও ছিল, ছিল নারী ও বৃদ্ধরাও। এমনকি পাঁচজন খ্রিস্টান রোহিঙ্গাও ছিলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।
জাতিসংঘের তীব্র প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত শুরু
১৫ মে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তর জানায়, দিল্লি থেকে আটক করে যাদের সাগরে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের সংখ্যা কমপক্ষে ৪০। তারা সবাই রোহিঙ্গা শরণার্থী, যাদের মধ্যে অনেকেই দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিলেন।
জাতিসংঘ এই ঘটনায় ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেছে—এটি ‘জীবনহানিকর ও অমানবিক আচরণ’। একই সঙ্গে ভারত সরকারকে এমন কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বানও জানায় সংস্থাটি।
ভারতের দায়িত্ব এড়ানো ও আদালতের দ্বারস্থ পরিবারগুলো
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নৌবাহিনী এই ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের পক্ষে আইনজীবী দিলাওয়ার হুসেইন জানান, পরিবারগুলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে একটি আবেদন জমা দিয়েছে।
তাদের দাবি—জোর করে বিতাড়িত করা অন্যায়, এবং তাদের আবার দিল্লিতে ফিরে এসে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের সুযোগ দিতে হবে।
বিশ্বজুড়ে সমালোচনা
ভারতের এই আচরণকে ‘নিন্দনীয়’ বলে উল্লেখ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।তারা বলছে, শরণার্থীদের সুরক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু ভারত সেটি না করে, সমুদ্রেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে নিরীহ মানুষদের।
সূত্র: এপি
উপমহাদেশ ডেস্ক
- উপমহাদেশ ডেস্ক#molongui-disabled-link
- উপমহাদেশ ডেস্ক#molongui-disabled-link
- উপমহাদেশ ডেস্ক#molongui-disabled-link
- উপমহাদেশ ডেস্ক#molongui-disabled-link