তারিখ প্রদর্শন

নির্বাচনের আগে তীব্র চাপ: রোডম্যাপ চায় বিএনপি, বিচার-সংস্কার দাবি জামায়াতের, ইসিতে আস্থা নেই এনসিপির

নির্বাচনের আগে তীব্র চাপ: রোডম্যাপ চায় বিএনপি, বিচার-সংস্কার দাবি জামায়াতের, ইসিতে আস্থা নেই এনসিপির
নির্বাচনের আগে তীব্র চাপ: রোডম্যাপ চায় বিএনপি, বিচার-সংস্কার দাবি জামায়াতের, ইসিতে আস্থা নেই এনসিপির। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে তিনটি ভিন্ন রাজনৈতিক দল—বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ন্যাশনাল কনসারভেটিভ পার্টি (এনসিপি)। তাদের আলোচনায় এই বার্তাটি স্পষ্ট—নির্বাচন নিয়ে এই তিন দলের অবস্থান একেবারে একরকম নয়, তবে তারা কেউই চোখ বন্ধ করে নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা মেনে নিচ্ছে না।

বিএনপির দাবি: রোডম্যাপ চান, পদত্যাগ নয়

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় যমুনা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি প্রতিনিধি দল জানান, তারা কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাননি। বরং একটি স্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ চায় দলটি। পাশাপাশি তারা নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবি জানিয়ে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, ‘নির্বাচন আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা বিএনপিকে জানিয়েছেন।’

জামায়াতের জোর: চাই সংস্কার, চাই বিচার

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বলেন, ‘জনগণের ভোগান্তি না হয়—সেই সময়েই নির্বাচন হওয়া উচিত।’ পাশাপাশি তার দাবি, ‘নির্বাচনের আগে সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচারের কিছু প্রক্রিয়া জনগণের সামনে আসা জরুরি।’ এতে বোঝা যাচ্ছে, জামায়াত কোনো সাধারণ নির্বাচনের পক্ষে নয়—তারা চাইছেন নির্বাচন যেন জনগণের আস্থা অর্জন করে।

ইসিতে আস্থা নেই এনসিপির, আগের সব নির্বাচন অবৈধ ঘোষণার দাবি

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই।’তারা বৈঠকে আরও দাবি জানান, শেখ হাসিনার শাসনামলে অনুষ্ঠিত সব জাতীয় নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এটি ছিল তাদের মূল দাবিগুলোর অন্যতম।

সরকারপক্ষের অবস্থান: ষড়যন্ত্র হলে সিদ্ধান্ত জানানো হবে

এদিন দুপুরে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন অসম্ভব হয়ে গেলে, সরকার জনগণের সামনে সব কারণ তুলে ধরবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের জানিয়েছেন, তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন।’

সার্বিক চিত্র বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে শুধু তারিখ নয়, বরং কাঠামো ও পরিবেশ নিয়েও নিশ্চিত হতে চাইছে। বিএনপি রোডম্যাপ চায়, জামায়াত চায় বিচার ও সংস্কার, আর এনসিপি তো গোটা ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিয়েছে। এর মাঝে সরকারও ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিদেশি চাপ বা অস্থিতিশীলতা বাড়লে তারা নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এই অবস্থায় সামনে আসছে বড় প্রশ্ন—আসন্ন নির্বাচন কি আদৌ গ্রহণযোগ্য হতে পারবে, নাকি আরও গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে দেশ?

আমাদের ফলো করুন