বিহারের কিশনগঞ্জ জেলার কোচাধামান ব্লকের কৈরী বীরপুর গ্রামের যুবক ফিরদাউস আলম ওরফে আসজাদ বাবু হরিয়ানার শুধু মাত্র টুপি পরায় পানিপথ জেলার ফ্লোরা সেক্টর ২৯-এ উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে নির্মমভাবে শহিদ হয়েছেন।
মুসলিম মিররের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ মে শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে এই ঘটনাটি ঘটে। সেদিন আসজাদ এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। এই সময় শিসু লালা নামের এক ব্যক্তি হঠাৎ করে আসজাদের মাথার টুপি ফেলে দেয়। আসজাদ টুপিটি কুড়িয়ে নিতে ঝুঁকলে ওই ব্যক্তি তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং তাকে রোহতকের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই পরদিন ভোরে তার মৃত্যু হয়।
খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই সাবেক কোচাধামান বিধায়ক মুজাহিদ আলম সক্রিয় হন। তিনি রাত থেকেই স্থানীয় বাসিন্দা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। প্রথম দিকে আসজাদের বড় ভাই, শ্বশুর ও স্ত্রী আইনি পদক্ষেপ নিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। পরে মালদা (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে আসা তার শ্বশুর রিজওয়ান সাহেবের সঙ্গে আলোচনার পর মুজাহিদ আলম তাদের মামলা করতে রাজি করান।
স্থানীয়দের সহায়তায় অভিযুক্ত শিসু লালাকে আটক করে ফ্লোরা সেক্টর ২৯-এর পুলিশ স্টেশনে হস্তান্তর করা হয়। মুজাহিদ আলম থানার স্টেশন হাউস অফিসার সুবাস জি ও উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তিনি এলাকায় বসবাসরত সীমাঞ্চলবাসীদের আশ্বস্ত করেছেন—পরিবারের পাশে থেকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।
ঘটনার শুরু থেকেই বালিয়া কাশীবাড়ির মাসাওয়ির বাবু মাঠপর্যায়ে সমন্বয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং সারাক্ষণ মুজাহিদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
ঘটনার পরদিন ২৫ মে ২০২৫ তারিখে ফ্লোরা সেক্টর ২৯ থানায় ২৮৮/২০২৫ নম্বর মামলা দায়ের করা হয়েছে। এফআইআরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৩(১) ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ শুরু করেছে। মুজাহিদ আলম দাবি করেছেন, এই হামলাকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হিসেবে বিবেচনা করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ইউএপিএ (UAPA) আইন প্রয়োগ করতে হবে এবং দ্রুত বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি—মৃত্যুদণ্ড—নিশ্চিত করতে হবে।
ময়নাতদন্ত শেষে রাতেই আসজাদের দাফন সম্পন্ন হয় ফ্লোরা সেক্টর ২৯-এর কবরস্থানে। মুজাহিদ আলম স্থানীয় মুসলিম সংগঠনের প্রতিনিধি মুনির সাহেবের সঙ্গেও কথা বলেন, যিনি নিহতের পরিবারকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
সাবেক এই বিধায়ক বিহার ও হরিয়ানা—উভয় রাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, নিহতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র: এমএম