তারিখ প্রদর্শন

সিন্ধু নদীর পানি একাই কুক্ষিগত করতে লাদাখে চারটি প্রকল্পে কাজ করছে ভারত

সিন্ধু নদীর পানি একাই কুক্ষিগত করতে লাদাখে চারটি প্রকল্পে কাজ করছে ভারত
সিন্ধু নদীর পানি একাই কুক্ষিগত করতে লাদাখে চারটি প্রকল্পে কাজ করছে ভারত। ছবি: সংগৃহীত

জল আগ্রাসনের আরও এক ধাপ হিসেবে, ভারত অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলে সিন্ধু নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করতে চারটি নতুন বাঁধ প্রকল্পে কাজ শুরু করেছে। এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক জল আইন এবং সিন্ধু জল চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন পানি বিশেষজ্ঞরা।

কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের বরাতে জানা যায়, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে লেখা এক চিঠিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পানি বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার আরশাদ এইচ. আব্বাসি ভারতীয় কার্যক্রম নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, ভারত বিতর্কিত লাদাখ অঞ্চলের আচিনাথাং, সানজাক, ফারফিলা, বাটালিক ও খালতসে এলাকায় ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করেছে।

চিঠিতে আব্বাসি বলেন, ‘এই প্রকল্পগুলো শুধু সিন্ধু জল চুক্তিকে লঙ্ঘন করে না, বরং পাকিস্তানে প্রবাহিত পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেই এগুলো পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে।’

আব্বাসি আরও দাবি করেন, এই প্রকল্পগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো সিয়াচেন হিমবাহ অঞ্চলে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাদের বিদ্যুৎ ও তাপ সরবরাহ নিশ্চিত করা। অথচ লাদাখের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্র ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী, প্রতি বছর কঠোর শীতের মধ্যে জীবনধারণের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

পানি বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেন, সিন্ধু জল চুক্তির আওতায় ভারত মাত্র ০.২৫ মিলিয়ন একর-ফুট পানি ব্যবহার করতে পারে—তাও শুধু গৃহস্থালি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। কিন্তু এর আগেই ভারত লাদাখে ৪৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নিমু বাজগো এবং ৪৪ মেগাওয়াট চুটাক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করেছে, যা সামরিক উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে চুক্তির সীমা অতিক্রম করে ভারত পানির উপর একচ্ছত্র দখলদারিত্ব কায়েমের চেষ্টা করছে।

চিঠিতে আব্বাসি জোর দিয়ে বলেন, ‘ভারতের এসব কর্মকাণ্ড প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতাকে ধ্বংস করার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা।’ তিনি জাতিসংঘের কাছে আহ্বান জানান, অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে সিন্ধু জল চুক্তিকে তার মূল চেতনায় ফিরিয়ে আনা হোক।

এদিকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল দ্য ডিপ্লোম্যাট সতর্ক করে বলেছে, ভারত যদি সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার পথে হাঁটে, তবে তা চীনকেও ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপে প্ররোচিত করতে পারে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ব্রহ্মপুত্র ভারতকে মোট পানির ৩০% এবং জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার ৪৪% সরবরাহ করে। অথচ চীন ইতিমধ্যেই এই নদীর ওপর বিশাল বাঁধ নির্মাণ করছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ পূর্বেই স্পষ্ট করে বলেছেন, সিন্ধু জল চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত বা বাতিল করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে হলে দুই দেশের পারস্পরিক সম্মতি অপরিহার্য।

আমাদের ফলো করুন