নিউজনেস্ট

তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে ভারত-চীন-পাকিস্তানের প্রতিযোগিতা

তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে ভারত-চীন-পাকিস্তানের প্রতিযোগিতা
তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে ভারত-চীন-পাকিস্তানের প্রতিযোগিতা। ছবি: সংগৃহীত

আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তারা একপ্রকার একঘরে হয়ে পড়েছিল। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যপট বদলে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার তিন পরমাণু শক্তিধর দেশ—চীন, ভারত ও পাকিস্তান এখন তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে যেন একপ্রকার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

যদিও এখনো কোনো দেশই তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি, তবু এসব দেশের কূটনৈতিক তৎপরতা বলে দিচ্ছে, সম্পর্কের পরিসর দ্রুত বাড়ছে। তালেবানের দাবি, বর্তমানে তারা বিশ্বের ৩৯টি দেশে দূতাবাস ও কনস্যুলেট চালু রেখেছে।

কূটনীতির নেপথ্যে চীন-পাকিস্তান সেতুবন্ধ

ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তালেবান ইস্যুকে ঘিরে চীন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত টানাপোড়েন আরও তীব্র হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চীন এখন তালেবান ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে, বিশেষ করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ উদ্বেগ এবং আফগান শরণার্থী প্রত্যাবাসনের মতো ইস্যুতে।

গত ২১ মে বেইজিংয়ে তালেবানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মোত্তাকি এবং পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে এক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। বৈঠকে তিনি বলেন, দুই দেশই কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী, রাষ্ট্রদূত বিনিময়ও চায়। চীন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আফগান-পাকিস্তান সম্পর্কোন্নয়নে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

এর আগেই, এপ্রিল মাসে পাকিস্তান ‘অবৈধ বিদেশি’ ফেরত পাঠানোর অভিযানে ৮ হাজারের বেশি আফগান নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠায়। এতে দুদেশের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়।

ভারতের নতুন কূটনৈতিক মোড়

অন্যদিকে, এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি হামলার পর ভারত সরাসরি তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। ওই হামলার নিন্দা জানান তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মোত্তাকি। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর তা প্রকাশ্যে স্বাগত জানান—যা ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

তালেবানের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা আগেই শুরু হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিক্রম মিস্রি কাতারে মোত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় উঠে আসে চাবাহার বন্দর ব্যবহার, আফগানিস্তানে ভারতীয় বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা ইস্যু।

কেন এই কূটনৈতিক উষ্ণতা?বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালেবান সরকারের সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠতা আকস্মিক কিছু নয়। বরং এর পেছনে রয়েছে গভীর কৌশলগত স্বার্থ। আফগানিস্তানের বিপুল খনিজ সম্পদ, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, জিনজিয়াংয়ের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা মিলিয়ে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে।আফগানিস্তানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারিদ মামুনজাই বলেন, আফগানিস্তানকে ঘিরে এখন যে প্রতিযোগিতা চলছে, তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রকাশ্য এবং তা উচ্চপর্যায়ের কূটনীতিতেও প্রতিফলিত হচ্ছে।

তাঁর মতে, পাকিস্তান আফগানিস্তানকে এখনো কৌশলগত ‘গভীরতা’র অংশ হিসেবে দেখে। চীনের জন্য এটি জিনজিয়াংয়ের নিরাপত্তা ও বেল্ট অ্যান্ড রোড সম্প্রসারণের সুযোগ। আর ভারতের দৃষ্টিতে এটি চীন-পাকিস্তান প্রভাব মোকাবেলার কৌশলগত ক্ষেত্র।তালেবানের চোখে ‘নতুন অধ্যায়’তালেবানেকে পশ্চিমা বিশ্ব এখনো স্বীকৃতি না দিলেও তালেবান বলছে, তারা এখন আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।

তালেবানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল মতিন কানাই ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, চীন, রাশিয়া, ইরান, এমনকি ভারতের সঙ্গেও আমরা সম্পর্ক জোরদার করেছি। এটা আমাদের জাতীয় স্বার্থেই হয়েছে।তিনি আরও জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হক্কানি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মোত্তাকি নতুন করে আফগান-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছেন। নতুন যুগের সূচনা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে কানাই বলেন, ‘হ্যাঁ, এটি একেবারেই সত্য।

’তালেবানের মতে, আঞ্চলিক শক্তিগুলোর এই আগ্রহ তাদের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং অর্থনৈতিক সুযোগ বাড়াচ্ছে। তবে সাবেক আফগান উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের আহমাদ আন্দিশা মনে করেন, ‘এই সব প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবেই।’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
+ posts

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত